দেশে নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তা পর্যায়ে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খাদ্য আমদানিতে জোর দিচ্ছে বর্তমান সরকার। এর ধারাবাহিকতায় তেল, চাল, ডাল ও সার আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব পণ্য কিনতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৪৬ কোটি টাকা।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১০ হাজার টন মসুর ডাল এবং ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেলে খরচ হবে ২৮৫ কোটি টাকা (২৮৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা)। এর মধ্যে ১৮৯ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সয়াবিন তেল কেনা হবে। এ ছাড়া ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিয়ে কেনা হবে মসুর ডাল। ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চালে ব্যয় হবে ২৭৪ কোটি ২০ হাজার টাকা। আরও জানা গেছে, ৩৬৪ কোটি টাকায় ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার এবং ১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার দুই কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্র বলছে, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য দেশীয় উৎস থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল এবং ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা (২৮৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা)। এর মধ্যে ১৮৯ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সয়াবিন তেল কেনা হবে। এ ছাড়া ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিয়ে কেনা হবে মসুর ডাল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে মসুর ডাল এবং সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
ভারত থেকে আমদানি করা হবে ২৭৪ কোটি টাকার চাল : দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতি কেজি চালের ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে ৫৪ টাকা ৮০ পয়সা। এতে ৫০ হাজার টন চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ২৭৪ কোটি ২০ হাজার টাকা।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-৪ এর আওতায় ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ থেকে অনুমোদিত হয়।
৩৬৪ কোটি টাকার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন : কাতার, সৌদি আরব এবং দেশীয় এক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৬৪ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় কাতার ও সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার টন করে ইউরিয়া আমদানি করা হবে। আর স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকেও ৩০ হাজার টন সার নেওয়া হবে।
কাতারের কাতার এনার্জি মার্কেটিং, সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে এই সার কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
দুই কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় এক হাজার ১৩৩ কোটি : দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ১৩৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে দেশীয় উৎপাদিত গ্যাসের পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে জি টু জি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার থেকে ২.৫ এমটিপিএ (মিলিয়ন টন পার এনাম) এবং ওমান হতে ১.০ এমটিপিএ এলএনজি অর্থাৎ মোট ৩.৫ এমটিপিএ (৫৬ কার্গো) এলএনজি ক্রয় করা হচ্ছে। এ ছাড়া, চাহিদার আলোকে অ্যানোয়াল ডেলিভারি প্রোগ্রামের (এডিপি) আওতায় স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি ক্রয় করা হয়।