ই-পেপার বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

উত্তরা ইপিজেডের সাফল্য
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগিয়ে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:১৫ এএম  (ভিজিট : ১২০)
গ্রামীণ জনপদে শিল্পায়নের মাধ্যমে মানুষের ভাগ্যের ও জীবনযাত্রায় যে আমূল পরিবর্তন আনা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ উত্তরা ইপিজেড। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীতে গড়ে তোলা এই ইপিজেডে একেবারে গ্রাম পর্যায়ের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যারা নিজ বাড়িতে থেকে-খেয়ে মাসে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে বদলে ফেলেছেন নিজেদের জীবন।

একটা সময় যেখানে দিনের তিন বেলার আহার জোটানোই কঠিন ছিল এসব মানুষের, এখন তারা উত্তরা ইপিজেডের শিল্প কারখানায় চাকরি করে ভালো খাচ্ছেন, মোটরসাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন, ঘরে ঘরে টিভি-ফ্রিজ শোভা পাচ্ছে এবং সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতও করছেন। এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবন-মান উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে উত্তরা ইপিজেডের দেশবন্ধু গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস’। নীলফামারীর এই উত্তরা ইপিজেডে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গত ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে ৭টা। ঘন কুয়াশায় ২০ গজ দূরের কিছুই স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে কনকনে শীত। প্রচুর ঠান্ডা বাতাস। ঠান্ডা, শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে হাজার হাজার কর্মী ঢুকছেন নিজেদের কর্মস্থলে কাজের জন্য। কেউ পায়ে হেঁটে আবার কেউ মোটরবাইকে করে। সে এক অপরূপ দৃশ্য। হ্যাঁ, সত্যিই তাই অসাধারণ এই দৃশ্য দেশের সবচেয়ে অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলায় অবস্থিত উত্তরা ইপিজেডের।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেলে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় মূলকাজ। চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এরপর দেওয়া হয় নামাজ ও খাবারের বিরতি। এখানেও পরিপালন হয় স্বাস্থ্যবিধি। কারখানার নিজস্ব ক্যান্টিনে একসঙ্গে ৫০০ থেকে ৬০০ কর্মী লাইন করে বসে সবাই দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। ২০ মিনিট পর আসে আরেক গ্রুপ। এভাবে ২ হাজার ৫০০ জন কর্মী দুপুরের খাবার গ্রহণ শেষ করেন। আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ও সারিবদ্ধভাবে চলাচল করে শ্রমিক-কর্মচারীরা।
কারখানায় কর্মরত কর্মীর ৯৫ শতাংশ স্থানীয় বাসিন্দা। তাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তাদের সবাই নিজেদের কর্মে ও প্রাপ্য বেতন-ভাতায় ব্যাপক সন্তুষ্টি। ১২ হাজার ৮০০ টাকার কম কারও বেতন নেই, দক্ষতা অনুসারে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন কর্মীরা। তবে ২৫ হাজার টাকার বেশি বেতনের কর্মী সংখ্যা অনেক কম। প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করেন কর্মীরা।
আঁখি নামে এক সুয়িংয়ের কর্মী বলেন, আগে ঢাকার সাভারে কাজ করতেন। সেখানে অভার টাইমসহ মোট ১৮ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পেতেন, তা দিয়ে ঘর ভাড়া ও খাওয়া-দাওয়ার পর হাতে বেশি টাকা থাকত না। কিন্তু এখানে ওভার টাইম ছাড়াই ১৪ হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান। পাশেই বাড়ি হওয়ায় বাড়তি কোনো খরচ নেই বললেই চলে। ফলে পুরো টাকাই হাতে থাকে। তার চেয়ে বড় কথা নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারছেন তিনি। এর চেয়ে বড় কথা আর কী হতে পারে বলে মন্তব্য করেন আঁখি।

সাইফুল নামে ফিনিশিংয়ের কর্মী বলেন, তিন বছর ধরে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসে কাজ করছেন। কাজের পরিবেশ ও কর্মকর্তাদের ব্যবহার এককথায় অমায়িক। তিনি এর আগে গাজীপুরের একটি কারখানায় কাজ করতেন। এ ধরনের পরিবেশ তিনি সেখানে পাননি। তা ছাড়া করোনার সময় কারখানা বন্ধ হওয়াতে এলাকায় চলে যান তিনি। বাড়িতে গিয়েই দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের খবর পান, যথাযথ নিয়ম মেনেই চাকরিতে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে তার বেতন ১৯ হাজারের একটু বেশি। নিজের এলাকায় নিজের পেশার কাজে ভালো বেতনে কাজ পাওয়ায় মহাখুশি সাইফুল। মা-বাবা, ভাইবোন ও স্ত্রী-সন্তান সবাইকে নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের জেনারেল ম্যানেজার (প্রোডাকশন) ইসুরু উমেশ জানান, উত্তরবঙ্গে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। এটিই বর্তমানে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পোশাক কারখানা।

দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) মো. ইব্রাহিম আকন জানান, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের উৎপাদিত পণ্য শতভাগ রফতানি হয়। বর্তমানে ইউরোপের বড় দুটি দেশ এখানকার উৎপাদিত পণ্যের ভোক্তা। এর একটি হচ্ছে ইউএসএর জি-থ্রি, কসকো ও ডিকনি। অন্যটি হলো স্পেনের ম্যাঙ্গো কোম্পানি। নতুন করে আরও কয়েকটি দেশ ও কোম্পানিকে যুক্ত করার জোর চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে ইউকের প্রাইমার্ক কোম্পানিটি মোটামুটি আলোচনা শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসের হেড অব এইচআর, অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স মো. আশরাফ উল্লাহ বলেন, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস বিদেশে পোশাক রফতানি করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখছে, তেমনই মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের কর্মসংস্থান ব্যাপক হারে সৃষ্টি হয়েছে। এককথায় দেশবন্ধু গ্রুপের মতো কোম্পানির কারণে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের দরিদ্র দূর করতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে উত্তরা ইপিজেড। বর্তমানে ২৬০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে ইপিজেডটি। এই ইপিজেডের ব্যাপক চাহিদার কারণে এর আকার আরও বেড়ে প্রায় ৩০০ একর হচ্ছে। বর্তমানে ২৩টি কারখানায় প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছে।

কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস শতভাগ রফতানিবান্ধব প্রতিষ্ঠান। যাতে এমব্রয়ডারি, ডেনিম গার্মেন্টস, ওয়াশিং ইউনিট এবং প্রিন্ট সুবিধা রয়েছে। প্রতি বছর এখান থেকে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭২ হাজার পিস ডেনিম/চিনো/কার্গো প্যান্ট, আউটওয়্যার, ফেন্সি অ্যাপারেলস উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে। তবে বর্তমানে সব কয়টি লাইন চালু না হওয়াতে বার্ষিক উৎপাদন হচ্ছে ৬০ লাখ পিস। সর্বমোট আয়তন ২ লাখ ৭১ হাজার ২৭২ বর্গফুট। এতে ইটিপি প্লান্ট ও ওয়াশিং প্লান্ট সুবিধাও বাস্তবায়ন হয়েছে। দেশবন্ধু টেক্সটাইলস তার পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরির মাধ্যমে মনোনিবেশ করেছে যা পরিবেশ গত সমস্যা নিরসন ও জ্বালানি উৎকর্ষ বৃদ্ধি করছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close