রাজশাহীতে বাস শ্রমিক ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের চলমান বিরোধে উভয়পক্ষকেই শান্ত থাকার অনুরোধ করেছে পুলিশ। তাদের এই বিরোধ মেটানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে রাজশাহী নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে উভয়পক্ষকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার নূর আলম সিদ্দিকী। এ সময় তিনি সবার কথা শোনেন এবং কোনো যানবাহন ভাঙচুর না করে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান।
সভা থেকে বেরিয়ে রাজশাহী সিএনজি মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এতগুলো সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুরের জন্য ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বকাঝকা করেছেন। তিনি মীমাংসা করে নেওয়ার অনুরোধ জানালে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলেছেন যে, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদের মধ্যস্থতায় তারা সমাধান করতে চান। আমরাও তাতে রাজি হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের চালকেরা রাস্তায় নেই। কেউ কোন বাস ভাঙচুর করবে না। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদের কাছে আমাদের বসার কথা আছে। সেখানে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণসহ সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখানে মীমাংসা হবে। যদি আশানুরূপ ফলাফল না পাই তাহলে সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুরের জন্য মামলা করব।’
রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিক আলী পাখি বলেন, ‘বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদ ভাই বিষয়টি সমাধান করে দেবেন বলে আশা করছি। এই সময়ের মধ্যে কেউ কোন বাসও ভাঙবে না, সিএনজিও ভাঙচুর করবে না। যে করবে সে অপরাধী হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুটি রুট ছাড়া সব রুটেই বাস চলছে। আগামীকাল আশা করছি ওই দুই রুটেও বাস চলবে।’
এর আগে, গত সোমবার সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা তানোর উপজেলা সদরে বাসের ছয়জন চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরকে মারধর করেন। এর জের ধরে দুপুর থেকে রাজশাহী থেকে সব রুটের বাস বন্ধ রাখা হয়। রাতে বাস চলাচল শুরু হলেও মঙ্গলবার সকালে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বাস শ্রমিকেরা নগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল থেকে লাঠিসোঁটা ও হাতুড়ি নিয়ে এসে রেলগেট সিএনজি স্ট্যান্ডে হামলা করেন। তারা ৭০ থেকে ৮০টি সিএনজি অটোরিকশার কাচ ভাঙচুর করে চলে যান। পরে দুপুর থেকে আবার বাস চলাচল শুরু হয়। তবে বুধবার সকাল থেকে আবার রাজশাহী-নওগাঁ রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আর আগে থেকেই বন্ধ আছে রাজশাহী-আমনুরা রুটের বাস।
তানোরে বাস শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় ১৮ সিএনজি অটোরিকশা চালকের নামে মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সিএনজি স্ট্যান্ডে হামলার ঘটনায় চালকেরা মামলা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের প্রভাবশালী দুই নেতার নাম থাকায় পুলিশ মামলা নেয়নি বলে জানিয়েছেন সিএনজি চালকেরা।
এর প্রতিবাদে বুধবার পবা উপজেলার নওহাটা ব্রিজ এলাকায় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা। দুপুর ১টার দিকে তারা সেখানে জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। কিছু সময় পর সড়ক ছেড়ে দিয়ে তারা দুইপাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। সিএনজি অটোরিকশার চালকদের এই কর্মসূচির কারণে ভাঙচুর আতঙ্কে রাজশাহী থেকে নওগাঁর উদ্দেশ্যে কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। নওগাঁর বাসগুলো মোহনপুর পর্যন্ত চলাচল করছে। তবে রাজশাহী-তানোর-মুণ্ডুমালা-আমনুরা রুটের বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
পবার নওহাটায় মানববন্ধনে সিএনজি চালকেরা বলেন, সিএনজি স্ট্যান্ডে এসে বাস শ্রমিকেরা তাদের ওপর আক্রমণ করে। তারা প্রায় ৯০টি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করেছে। যাত্রী-চালকসহ অন্তত ৪০ জনকে মারধর করা হয়েছে। তারা এই ঘটনার বিচার চান।
রাজশাহী নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিষয়টির সমাধান হওয়া উচিত। আমরা আশা করছি আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হবে।’
সময়ের আলো/আরআই