মস্কোতে এক বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন রুশ সেনাবাহিনীর নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল, কেমিক্যাল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (এনবিসি) প্রধান জেনারেল ইগর কিরিলভ।
রাশিয়ার তদন্তকারী কমিটির বরাতে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকালে একটি আবাসিক এলাকায় স্কুটারে লুকানো বোমার বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তার। এ সময় তার সহকারীও নিহত হয়েছেন। ক্রেমলিন থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার (৪ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে রাশিয়ার প্রধান তদন্ত সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন।
এদিকে ইগর কিরিলভকে বোমা ফাটিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন। মঙ্গলবার মস্কোয় ইউক্রেনের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউর একটি বিশেষ অভিযানে তাকে হত্যা করা হয় বলে একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে। তবে তাদের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
সূত্রটি জানিয়েছে, কিরিলভকে একজন যুদ্ধাপরাধী ও সর্বোচ্চ বৈধ টার্গেট হিসেবে বিবেচনা করে কিয়েভ। তিনিই ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে কথিত নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি ইউক্রেনের। রাশিয়ার রেডিয়েশন ও রাসায়নিক সুরক্ষা বাহিনীর প্রধানকে নির্মূল করা এসবিইউ-এর কাজ। মস্কোর রিয়াজানস্কি প্রসপেক্টের একটি ভবনে কিরিলভ ও তার সহকারী প্রবেশ করলে তাদের স্কুটারে বিস্ফোরক যন্ত্র লুকিয়ে রাখা হয়। পরে সেটি বিস্ফোরিত হয়ে তারা দুজনই নিহত হয়।
এদিকে রাশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, বিস্ফোরক ডিভাইজে ৩০০ গ্রামের টিএনটি বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল। দেশটির একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, একটি ভবনের প্রবেশ মুখ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এর পাশেই রক্তমাখা তুষারের কাছে দুটি মরদেহ পড়ে আছে। গত সোমবার কিয়েভ ইনডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কিরিলভ ইউক্রেনে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ এনেছিল ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিস (এসবিইউ)। এসবিইউর দাবি, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে কিরিলভের নেতৃত্বে রাশিয়া প্রায় ৫ হাজার বারের মতো রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। ড্রোনের মাধ্যমে ইউক্রেনীয় সেনাদের ওপর রাসায়নিক গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে রুশ বাহিনী। এসব গ্রেনেড চোখ ও শ্বাসতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ইউক্রেনের কর্নেল আরতেম ভ্লাসিউক বলেন, যুদ্ধের সময় ২ হাজারেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা রাসায়নিক বিষক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং তিনজন মারা গেছেন। এসবিইউ জানায়, কিরিলভকে যুদ্ধাপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের অধীনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।
এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভূমিকা রাখার জন্য যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডাসহ অন্য দেশগুলো কিরিলভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। গত অক্টোবরে কিরিলভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য জানায়, তিনি ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের দায়িত্বে আছেন এবং ‘ক্রেমলিনের মিথ্যাচারের মুখপাত্র’ হিসেবে কাজ করছেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসের প্রতিবেদনে জানা যায়, কোস্ট্রোমা হাইয়ার মিলিটারি কমান্ড স্কুল অব কেমিক্যাল ডিফেন্সে পড়াশোনা করেন কিরিলভ। রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে রেডিয়েশন, রাসায়নিক এবং জৈব (বায়োলজিক্যাল) প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের অধীন পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিলে এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে মনোনীত হন কিরিলভ।
২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রুশ বাহিনীর সিরিয়া মিশনের অন্যতম জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ছিলেন কিরিলভ। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মস্কো ফিরে আসেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র যে রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদনের জন্য ইউক্রেনে গোপনে বিনিয়োগ করছে, এ তথ্য ফাঁস করেছিলেন তিনিই। সে কারণে ২০২২ সালেই তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ওয়াশিংটন।
সময়ের আলো/আরএস/
'