প্রকাশ: বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১:১০ এএম (ভিজিট : ২১৬)
সৃষ্টির সেরা জীব মানবকূলের ওপর মহান আল্লাহর নেয়ামত ও উপহারের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। মানবজাতির শ্রেষ্ঠতম উপহার তার ভাষা। এই ভাষা মনের ভাব প্রকাশের এক অবিশ্বাস্য শক্তি, যা একমাত্র মানব জাতিরই বৈশিষ্ট্য।
ভাষা মানুষকে সৃষ্টির সেরা বানিয়েছে। ভাষার বৈচিত্র্য স্রষ্টার আরেক মহিমা। মানুষের জীবনকে সহজসাধ্য করার একটি মহৎ অভিপ্রায় এটি। পৃথিবীর উন্মেষকাল থেকে অদ্যাবধি কত শত ভাষার বিলুপ্তি ও উৎপত্তি ঘটেছে, তা সহজে অনুমেয় নয়। বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবেই দুই শতাধিক ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু আবহমানকাল ধরে নিজের ভাব-ঐশ্বর্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে চলতে পেরেছে মুষ্টিমেয় কিছু ভাষা। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে আরবি।
আরবি ভাষা যুগ যুগ ধরে তার ভাব-ঐশ্বর্য, সৌন্দর্য ও পূর্ণতা নিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন। এই সৌন্দর্য ও ভাব-ঐশ্বর্যের কারণে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ভাষা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে আরবি ভাষা।
আরবি ভাষার শ্রেষ্ঠত্বের পেছনে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে তার সৌন্দর্য। যে সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয় তার বর্ণমালায়, তার শব্দমালায় এবং তার বাচনভঙ্গি, প্রকাশরীতি ও বাগধারায়। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে সৌন্দর্যে পৃথিবীর সব ভাষাকে ছাড়িয়ে গেছে আরবি ভাষা। আরবির সৌন্দর্যের দিকগুলো ব্যাপক ও বিস্তৃত। তার প্রথম সৌন্দর্য বর্ণমালায়। তার বর্ণগুলো সুবিন্যস্ত।
বর্ণোচ্চারণের স্থানগুলো নির্দিষ্ট ও ব্যাপক। প্রতিটি বর্ণ নির্দিষ্ট স্থান থেকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে উচ্চারিত হয়। দৃঢ়তা ও স্থিরতা শব্দের মধ্যে এক বিস্ময়কর সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। শব্দকে করে শ্রুতিমধুর। আরবির দ্বিতীয় সৌন্দর্য তার শব্দমালায়। দৃঢ়, কোমল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বর্ণমালার মিশ্রণে তৈরি হয় আরবি শব্দগুচ্ছ। কোমলতা ও সামঞ্জস্যতার কল্যাণে শব্দের মধ্যে শ্রুতিমধুর ঝঙ্কার তৈরি হয়। ভাষার ধ্বনির মিলন ঘটে প্রকৃতির ধ্বনির সঙ্গে। আরবি শব্দগুচ্ছের অনন্যতা তার প্রাচুর্যে। আরবি শব্দকোষ সংখ্যায় পৃথিবীর সব ভাষার শব্দভান্ডারকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। আরবি ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের সংখ্যা পঞ্চাশ লক্ষাধিক।
আরবি ভাষার তৃতীয় সৌন্দর্য তার বাগধারায়। সুন্দর বাচনভঙ্গি ও অভিনব প্রকাশরীতিতে আরবির একচ্ছত্র আধিপত্য। তার অভিনবত্ব, কমনীয়তা ও চমৎকারিত্বেই আরবি ভাষার অনন্যতা। আরবিতে প্রবাদ-প্রবচন, দৃষ্টান্ত-বাক্য, প্রয়োগ-বাক্য ও বাগধারা ব্যবহৃত হয় প্রচুর পরিমাণে। অনেকেই আরবিকে ‘বাগধারার ভাষা’ বলে আখ্যায়িত করে। আরবি বাগধারার সৌন্দর্যের মূল রহস্য তার রচনাশৈলীতে। আরবির রচনাশৈলী ভাব সমৃদ্ধ এবং অপূর্ব শিল্পসুষমা মণ্ডিত ও রস মাধুর্যপূর্ণ। রচনাশৈলীর এই পরম উৎকর্ষ আরবি বাগধারায় অনন্যতা সৃষ্টি করেছে। আরবি ভাষার আরেকটি সৌন্দর্য তার শ্রুতিমধুরতা। তার বর্ণ-শব্দের মিশ্রণে গঠিত বাগধারা ও বাকভঙ্গি শ্রোতার মনকে করে আন্দোলিত। প্রতিটি প্রাণে সঞ্চার করে আকর্ষণ-শক্তি। এই শ্রুতিমধুরতা আরবি ভাষার অনন্য গুণ। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী আল-হাদিস তারই প্রমাণ বহন করে। যদিও এই ভাষার অপরাপর শব্দগুচ্ছ ও বাগধারাও সঙ্গত কারণেই এর ব্যতিক্রম নয়। আরবি ভাষার এই সৌন্দর্যের কাছে পৃথিবীর সব সৌন্দর্য্য ম্লান।
আরবি ভাষা সৌন্দর্যের ভাষা। সৌন্দর্য ও আভিজাত্য তার গৌরব। আর পূর্ণতা ও অমরত্ব তার অধিকার। এই ভাষা আবহমানকালের। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন, সমৃদ্ধ ও সহজবোধ্য ভাষা এটি। শ্রেষ্ঠত্ব, গুরুত্ব, সৌন্দর্য ও প্রাচুর্যের কল্যাণে বিশ্বের জনপ্রিয় একটি ভাষায় পরিণত হয়েছে আরবি ভাষা। তাই আরবি শেখা, চর্চা করা এবং আরবির মৌলিক জ্ঞানার্জন এখন সময়ের দাবি।
সময়ের আলো/আরএস/