নীতিবান মানুষকে সবাই শ্রদ্ধা করে। ইসলামেও নীতিবান মানুষের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে বিশেষ পুরস্কার। নৈতিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষ অর্জনের মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। মহান আল্লাহ তাদের এতই ভালোবাসেন যে দিনের বেলায় রোজা ও রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের সমপরিমাণ মর্যাদা দান করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) রোজা পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদ আদায়কারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে (আবু দাউদ : ৪৭৯৮)।
যার চরিত্র যত সুন্দর, সে আল্লাহর কাছে ততবেশি প্রিয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা, যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী’ (জামিউস সগির : ২১৮)। বিশিষ্ট তাবেয়ি মাসরুক (রহ.) বলেন, একবার আমরা আবদুল্লাহ ইবনে আমরের (রা.) কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) স্বভাবগতভাবে অশালীন ছিলেন না এবং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে অশালীন কথা বলতেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব-চরিত্র উত্তম সেই সর্বোত্তম। (বুখারি : ৬০৩৫)
ন্যায়নীতি ও উত্তম চরিত্র ঈমানকে পরিপূর্ণ করে। চারিত্রিক সৌন্দর্য অর্জন না করে ঈমানের সৌন্দর্য অর্জন করা সম্ভব নয় এবং নিজে যেমন হেদায়েতপ্রাপ্ত হওয়া সম্ভব নয় তেমনি অন্যকেও হেদায়েতের দাওয়াত দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত’ (সুরা কলম : ৪)। যার চরিত্র আদর্শ ও উত্তম হবে তার জন্য ঘোষণা করা হয়েছে পুরস্কার। স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণকারী পুরুষ জান্নাতি হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করো’ (সুরা নিসা : ১৯)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সমগ্র পৃথিবীই সম্পদ। আর দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে সতী-সাধ্বী নারী’ (বুখারি ও মুসলিম সূত্রে মেশকাত : ৩০৮৩)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আদর্শ মানুষ ও পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সুন্দর এবং সে তার স্ত্রীর কাছে ভালো’ (রিয়াজুস সালেহিন : ২৭৮)। মহানবী (সা.) উত্তম চরিত্রের বিষয়ে আল্লাহর কাছে বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়েত, আল্লাহর ভয়, সচ্চরিত্র ও অভাব মুক্তির প্রার্থনা করছি।’ (মুসলিম : ৪৮৯৮)
নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্রের নির্দেশে পবিত্র কুরআন বলছে, ‘হে নবী! আপনি মুমিন পুুরুষদের বলেন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি নিচু করে রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গ হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্র পন্থা। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের কর্ম সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত’ (সুরা নুর : ৩০)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘চোখের ব্যভিচার হলো অন্যায় দৃষ্টিপাত’ (মুসলিম : ৬৯২৫)। আদর্শ পুরুষের প্রধানতম চরিত্র হলো অন্তরে আল্লাহর ভয়। কুরআনুল কারিমের ঘোষণা, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যতটা ভয় তাঁকে করা উচিত। আর তোমরা খাঁটি মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’ (সুরা আলে ইমরান : ১০২)। তাই আমাদের কর্তব্য উত্তম চরিত্র গঠনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা। রাসুল (সা.) যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে চলা। সত্যবাদী হওয়া, আমানতের ব্যাপারে সচেতন হওয়া, নম্র হওয়া, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, কারও সঙ্গে অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করা, প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, বিপদে ধৈর্যধারণ করা, লজ্জাবতী হওয়া, ন্যায়পরায়ণ হওয়া, দয়ালু হওয়া, অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা।