ভোজ্যতেল আমদানি ও প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর তেলেসমাতি কারবার এখনো থামেনি। এক রকম জোর করে লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়িয়ে নেবার পরও তেলের সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছে কোম্পানিগুলো। জানা গেছে, আবারো ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর জন্যই প্রতিষ্ঠানগুলো এই কৌশল গ্রহণ করেছে। সরবরাহ কমানোর কারণে বাজারে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল এবং খোলা সয়াবিন তেলের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা কয়েক দোকান ঘুরেও এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন না।
এদিকে খোলা সয়াবিন তেল নিয়ে এক প্রকারের নৈরাজ্য চলছে। ব্যবসায়ীরা খোলা সয়াবিন তেলের দাম ইচ্ছামতো রাখছে। কোনো কোনো ব্যবসায়ী খোলা সয়াবিন তেল ২০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছেন। গতকাল সোমবার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বোতলের সয়াবিন তেল বাজারে ছাড়ে তারা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। দাম বাড়ানোর পরও তারা তেল সরবরাহ করছে না। কবে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে সেই তথ্যও কোম্পানির লোক দিতে পারছে না।
বাজারে হঠাৎ করে বোতলের সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই দাম বাড়ানোর ফলে এখন বোতলের এক লিটার সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৫৭ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৯০৫ টাকায় আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
তবে এ দামে কোথাও সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ দোকানেই বোতলের সয়াবিন তেল নেই। দু-একটি দোকানে সীমিত পরিসরে বোতলের সয়াবিন তেল থাকলেও দাম রাখা হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা পর্যন্ত। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ২০০ টাকা কেজি।
কল্যাণপুর নতুন বাজারে ২০০ টাকা লিটারে সয়াবিন তেল বিক্রি করা দোকানদার বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে কোম্পানির লোক বোতলের সয়াবিন তেল দিচ্ছে না। আমাদের কাছেও এখন বোতলের সয়াবিন তেল নেই। আর খোলা সয়াবিন তেল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই আমরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছি। বোতলের তেল বাজারে এলে হয়তো দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে কবে নাগাদ বোতলের সয়াবিন তেল আসবে সেই তথ্য কোম্পানির লোক দিতে পারছে না।
আরেক দোকানদার কবীর হোসেন বলেন, দাম বাড়ানোর আগে থেকেই বাজারে বোতলের সয়াবিন তেল নেই হয়ে গেছে। লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর পরও কোম্পানি বোতলের তেল দিচ্ছে না। কোম্পানির লোকও এখন কম আসছে। তাদের কাছে প্রশ্ন করলে বলে, কোম্পানি থেকে সরবরাহ শুরু করলে তেল দিয়ে যাবে।
বোতলের সয়াবিন তেল বাজারে না থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া খোলা সায়বিন এখন ১৮৫ থেকে ১৯৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দ্রুত বোতলের তেল না এলে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
সাইফুল ইসলাম নামের এই দোকানদার বলেন, আমার কাছে বোতলের যে সয়াবিন তেল রয়েছে, তা আগের কেনা। নতুন দামের সয়াবিন তেল কোম্পানি থেকে এখনো দেয়নি। আমরা বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা বিক্রি করছি। নতুন দামের তেল এলে, বোতলের গায়ে যে দাম লেখা থাকবে, সেই দামে বিক্রি করবো।
খোলা সয়াবিনের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোলা সয়াবিন তেল ১৯৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি। সরকার তো খোলা সায়বিনের দাম ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করেছে? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সরকার সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করেছে লিটারে, আমরা বিক্রি করি কেজিতে। ১৯৫ টাকার কমে সয়াবিন তেল বিক্রি করা সম্ভব না। এই দামে যার ইচ্ছা নেবে, না নিলে না নেবে।
শান্তিনগর বাজার ঘুরেও বোতলের সয়াবিন তেল খুব একটা চোখে পড়েনি। আর খোলা সয়াবিন দোকান ভেদে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। মো. আলম নামের শান্তিনগরের এক ব্যবসায়ী বলেন, সরবরাহ না থাকায় সরকার সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু বাজারে কার্যকর তদারকি নেই। যে কারণে দাম বাড়ানোর পর এক সপ্তাহ চলে গেলেও বোতলের সয়াবিন তেল বাজারে আসছে না। আর খোলা সয়াবিন যারা পাইকারি বিক্রি করে তারাও বাড়তি দাম রাখছে। ফলে আমাদের বাড়তি দামে সয়াবিন বিক্রি করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাজারে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয় গত ৯ ডিসেম্বর। সেদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেল পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। জানানো হয় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম হবে ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন বিক্রি হবে ১৫৭ টাকা। আগে বোতলজাত তেল ১৬৭ টাকা ও খোলা তেল ১৪৯ টাকা ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দিন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে তেলের ঘাটতি রয়েছে, এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, ভোক্তারাও অস্বস্তিতে রয়েছেন। সেজন্য আমরা তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছি। নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি বাজারে আর তেল সরবরাহের ঘাটতি হবে না।