বিদেশে বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। পাকিস্তান, ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়াসহ বিদেশের অবস্থিত সকল বাংলাদেশি মিশনে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন এবং আগামী দিনগুলোর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করে দোয়া করা হয়।
ব্যাংককে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ দূতাবাস, ব্যাংকক সোমবার যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস ২০২৪ উদযাপন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রদূত ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মার শান্তি কামনা, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিশুসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রদূত ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে বিজয় বাংলাদেশের মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছিল, সেই চেতনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমরা অতীতের ভুলক্রুটি শুধরে নিয়ে একটি বিজয়ী জাতি হিসেবে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হব। নতুন প্রজন্মের সাথে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীকেই বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তিনি সকলকে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, যথাযথ মর্যাদা, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন করেছে। এ উপলক্ষে হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করা হয়। হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী, প্রবাসী বাংলাদেশীরা এবং তাদের পরিবারবর্গ, এ অনুষ্ঠানমালায় অংশগ্রহণ করেন। দূতালয় প্রাঙ্গণ বিজয় দিবসের ব্যানার ও পোস্টার দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। সকালে হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতিতে দূতালয় প্রাঙ্গণে হাইকমিশনার মোঃ ইকবাল হোসেন খান আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনাপর্ব শুরু হয়। ৫৩তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করা হয়। অতঃপর মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্যভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। আলোচনাপর্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপহাইকমিশনার মোঃ আমিনুল ইসলাম খাঁন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন।
হাইকমিশনার মোঃ ইকবাল হোসেন খান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির এক গৌরবোজ্জল দিন। তিনি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহিদদের। বিশেষভাবে স্মরণ করেন দুই লক্ষাধিক সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ও আহত ছাত্র-জনতার প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে হাইকমিশানর বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে আগামীতে এমন একটি গণতান্ত্রিক, উন্নত, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থকতা লাভ করে। পরিশেষে দেশের জন্য আত্মত্যাগকারী শহিদদের আত্মার মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়াও, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দূতালয় প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোরসহ সকলের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণ এবং অতিথিদের আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালা সমাপ্ত করা হয়।
সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বিজয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বিনির্মান ও দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স এস এম রকিব উল্লাহ। বিজয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের মধ্যে একতা বজায় রেখে বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য সম্মান বৃদ্ধি ও বাংলাদেশকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স এস এম রকিব উল্লাহ। পাশাপাশি তিনি প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যন্স পাঠিয়ে দেশ ও দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার অনুরোধ করেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ত্রিশ লক্ষ শহিদ ও নির্যাতিত দুই লক্ষাধিক মা-বোনদের এবং জুলাই আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে শহিদ ছাত্র জনতাদের তিনি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স এস এম রকিব উল্লাহ বলেন, একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে হলে নিজেদের মধ্যে একতার কোন বিকল্প নাই। নিজেদের মধ্যে একতা ছিলো বলেই ১৯৭১ সালে নিরস্ত্র বাঙালী অস্ত্রে-শস্ত্রে সুসজ্জিত পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশ স্বাধীন করেছিল। একইভাবে, ছাত্র জনতার একতা ২০২৪ এ আবার আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ আরেকবার আস্বাদন করিয়েছে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার সকালে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স এস এম রকিব উল্লাহ। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তারা ও রিয়াদস্থ প্রবাসী বাংলাদেশিরাও উপস্থিত ছিলেন। এরপর দূতাবাসে স্থাপিত অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠন ও ফুল দিয়ে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীরা তাঁদের বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের বিজয় অর্জন, জুলাই ‘২৪ এর গণ-আন্দোলনের ওপর আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন দূতাবাসের কার্যালয় প্রধান কাউন্সেলর মোঃ বেলাল হোসেন। আলোচনা সভার শুরুতে দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করা হয় এবং একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে দেশের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
ইতালির রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস- ২০২৪ উদযাপিত হয়েছে। দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীর উপস্থিতিতে সোমবার সকালে রাষ্ট্রদূত রকিবুল হক জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, দিবসটির উদযাপনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে, সম্মেলন কক্ষে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী, ইতালিতে অধ্যায়নরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক, ব্যবসায়িক ও প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ও বাংলাদেশের বন্ধু প্রতীম বিশিষ্ট ইতালিয়ান নাগরিকদের অংশগ্রহণে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭১ সালে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদদের এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করা হয়। তাছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত দিবসটির উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে, বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে ইতালিতে বসবাসরত শিক্ষার্থী, বিশিষ্ট বাংলাদেশি নাগরিক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের গৃহীত সংস্কার পদক্ষেপ কে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও জোরদার ভূমিকা রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আলোচনা পর্ব শেষে, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।
রাষ্ট্রদূত রকিবুল হকের বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়। রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকারের সকল কর্মকাণ্ডকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদান উল্লেখ করে, দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আরও বেশি করে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখতে তাদের প্রতি অনুরোধ জানান।