প্রকাশ: সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:৩৩ এএম (ভিজিট : ৫২)
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে শুকনো খড় পচে নষ্ট হওয়ায় উপজেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে গবাদিপশু খাদ্যের তীব্র সংকট। কিছু স্থানে খড় পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে চড়া দাম দিয়ে। ফলে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।
জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও থেমে থেমে কয়েক দফার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। চাষিদের খড়ের গাদা পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে খামারিদের সঞ্চিত খড় নষ্ট হওয়ায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
খামারিরা জানিয়েছেন, মৌসুমি কয়েকজন ব্যবসায়ী উঁচু অঞ্চল থেকে খড়ের গাদা কিনে এনে আঁটি তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। খড় আগের চেয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
অন্যদিকে ভুসি ও চালের গুঁড়াসহ বিভিন্ন দানাদার গোখাদ্যের দামও লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। প্রতি বস্তা ভুসি ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের গুঁড়া ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৮২০ টাকা হয়েছে। ধানের গুঁড়া প্রতি বস্তা ৫২০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার চান্দ্রা এলাকার খামারি রাসেল শেখ বলেন, তার গরুর জন্য চরবসন্ত এলাকার বটতলী বাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে খড় কিনেছেন। যাতে একটি মিনি পিকআপ ভ্যানও ঠিকমতো ভরেনি। এই পরিমাণ খড় গত বছর তিনি ২ হাজার টাকাতেও কেনেননি। গরুকে বাঁচিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে ৫ গুণ বেশি মূল্যেই খড় কিনতে হয়েছে।
বড়ালী এলাকার খামারি ইব্রাহিম বলেন, সারা বছর গোখাদ্যের জন্য সঞ্চিত রাখা হতো শুকনো খড়। এ বছর অতিবর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে খড় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। মাঠে ধান থাকায় কাঁচা ঘাসও মিলছে না। তিনিও চড়া দামে মতলব উপজেলা থেকে ১২ হাজার টাকার খড় কিনেছেন, তবে তা তিনটি গরুর ১০ দিনের খাবারও হয়নি।
আবুল কালাম নামে আরেক খামারি জানান, ভুসি ও ধানের গুঁড়াসহ দানাদার খাদ্যের দামও বেড়েছে। খড় ও দানাদার খাদ্য মিলে প্রতিটি গরুর খাদ্যের পেছনে দৈনিক ২৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আগামী দুই মাসেও মাঠে নতুন ঘাস আসবে না, তাই বাড়তি দাম দিয়ে গোখাদ্য কিনে গরুকে খাওয়াতে হবে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুমন ভৌমিক বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে খামারিদের সঞ্চিত খড়ের গাদা পচে নষ্ট হওয়ায় গরুর শুকনো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে দানাদার খাদ্যের মূল্য ন্যায্যতার বাইরে নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ জন্য বিভিন্ন বাজারের গোখাদ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। ঘাস চাষ ও বিভিন্ন উপায়ে পশু পালনের স্বার্থে খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সমিয়ের আলো/আরএস/