পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে একটি দেশ হওয়ার পরও সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ছিল প্রকট। বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের বিনির্মাণের স্বপ্ন থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি সৃষ্টি হয়। একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে জয়লাভ করা বিশ্বের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে আসে চূড়ান্ত বিজয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের। ২০২৪ সালেও একই গল্প, ভিন্নতা শুধু সময়ে আর তারুণ্যে। বাংলাদেশের সবচেয়ে কর্তৃত্ববাদী হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লব ঘটেছে বৈষম্য থেকেই।
বিজয়ের ৫৩ বছরে এ দেশে অনেক জল গড়িয়েছে পদ্মা মেঘনা যমুনায়। সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভূত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা, জীবনমান থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই এ পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। স্বাধীনতার স্বাদ সবাই কম-বেশি গ্রহণ করেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের গণহত্যা নাড়া দিয়েছিল বিশ্ব বিবেককে। এরপর থেকেই তরুণরা যুক্ত হয় মুক্তিযুদ্ধে। তেমনি ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, পুরো জাতিকে রীতিমতো শোকে মুহ্যমান করে দেয়। আবু সাঈদ যখন গুলিবিদ্ধ হন, স্বয়ং আবু সাঈদও বিশ্বাস করতে পারেননি পুলিশ নিরস্ত্র আবু সাঈদের ওপর গুলি চালাতে পারে। তিনি বুক চিতিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ালেন, শুধু তার বুকে নয়-আমজনতার রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি যতটুকু বিশ্বাস ছিল তার বুকেও গিয়ে বিঁধল সেই গুলি।
একাত্তরের উত্তাল সময়ে এ দেশের মানুষ দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যার যা ছিল তাই নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সম্পৃক্ত হয়। স্বাধীনতার পর এত রক্ত দেখেনি দেশ, বিদ্রোহে ফেটে পড়েনি মানুষ। নির্বিচারে গুলির প্রতিবাদে বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকেনি আর কোনো ‘আবু সাঈদ’। এবারের বিজয় দিবসে মুখে মুখে উচ্চারিত হবে জুলাই বিপ্লবের শহিদ আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ গণআন্দোলনে নিহত অনেকের নাম। শহিদদের স্মৃতি উচ্চারণ করে তাদের আত্মত্যাগের মহিমাকে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নেবে নতুন বাংলাদেশ।
২০২৪ সালের আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, আপামর জনতা আমাদের পাশে ছিল। আমরা যে রাস্তায় গুলি খাচ্ছিলাম, খাবার না খেয়েছিলাম তারা বাসা থেকে এনে দিচ্ছিল। যখন গুলি লাগে তখন আমার সঙ্গের ভাইরা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আসে। কিন্তু আমি তো তাদের চিনি না। তখন তো যুদ্ধ ক্ষেত্রে ছিলাম।
একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বীরবিক্রম বলেন, স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেওয়ার সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমানের পাশেই ছিলেন। পটিয়া থানা থেকে আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিই। আমি জিয়াউর রহমানকে রেডিও স্টেশনে যেতে বলি এবং তাকে একটি গার্ডসহ কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে পাঠাই। এটি একটি ট্রান্সমিটিং স্টেশন ছিল, যা কিছুটা পরিবর্তন করে ব্রডকাস্টিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুর্শিদ বলেন, আমি ১৯৭১ দেখেছি খুব কাছ থেকে কিশোরী হিসেবে। সেটারও অংশীদার ছিলাম আমরা। ২০২৪ সালে আমি যখন দেখি, তখন আমি দেখি ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্জন্ম।