ই-পেপার সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

উদ্বোধন হচ্ছে আজ
বিআরটির সুফল নিয়ে শঙ্কা
প্রকাশ: সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:১৪ এএম  (ভিজিট : ৯৪)
গাজীপুর থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বাস সার্ভিস উদ্বোধন করা হবে।

গত ৭ ডিসেম্বর দুপুরে বিআরটি প্রকল্প পরিদর্শন শেষে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী বিআরটি স্টেশনে এক আলোচনা সভায় এ কথা জানিয়েছেন সড়ক পরবিহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক। এ সময় সড়ক বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

কিন্তু ওই মহাসড়কে পায়ে হাঁটা মানুষের চলাচলের সুযোগ না থাকা, যানজট, ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় প্রকল্পের সামগ্রিক সুফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ। মহাসড়কে বিআরটি অংশ বাদ দিলে থাকে দুপাশে একটি করে লেন। একটি লেন দিয়ে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে না। এ প্রকল্পের মধ্যে পথচারী বা পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কথা ভাবা হয়নি। 

পথচারীদের চলাচলের জায়গা নেই। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে এর ভবিষ্যৎ খারাপ। ফুটপাথের প্রশস্ততা এমনিতেই কম। তা ছাড়া জায়গায় জায়গায় স্টেশনের পিলার ও সিঁড়ি বসায় এটি কোনো কাজে আসবে না। মানুষজনকে ঘুরেফিরে রাস্তায় হাঁটতে হবে। ফুটপাথ বন্ধ করে স্টেশনের স্থাপনা নির্মাণ, বিশেষ লেনের দুই পাশে বিভাজক না রাখা এবং সড়কের পাশের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের চলাচলের ব্যবস্থা না করায় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিআরটি লেনে রাস্তার মাঝে স্টেশন থাকবে। ফলে যাত্রী ওঠানামায় বাসের ডান পাশে দরজা থাকতে হবে। বিশেষায়িত বাস না পাওয়া পর্যন্ত বিআরটি লেনে বিআরটিসির বাস উল্টো পথে চালানো হবে। ফলে বাসের দরজা স্টেশনমুখী হবে। যাত্রীরা ডান পাশ দিয়ে নামতে পারবেন। দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত করিডোর জয়দেবপুর-টঙ্গী সড়কে দিনে ৬০ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু বিআরটির সমীক্ষায় প্রাক্কলন করা হয় ৩৫ হাজার গাড়ি। ব্যস্ততম এ সড়ক বিআরটির নির্মাণে রাস্তা সংকুচিত হয়েছে। এতে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ একসময় তীব্র যানজটে যেতে ৮-১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লাগত। এবার বিআরটি প্রকল্পের লেন চালু হলে এর ভয়াবহতা বাড়তে পারে।

বাসচালক মান্নান জানান, টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা কিংবা শিববাড়ী কোথাও কোনো বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা নামা করানোর জায়গা নেই। যে কারণে ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে হয়। এতে মাঝেমধ্যেই যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে বিআরটিএর লেনে এখন পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারায় তেমন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে না কিন্তু ওই লেনটি বন্ধ করে দিলে যানজট সৃষ্টি হবে।

স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কারখানা মহাসড়কে পাশে হওয়ায় ছুটির পর মহাসড়ক দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরতে হয়। কিন্তু এই সড়কে হাঁটার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। যে কারণে এখনই মাঝেমধ্যে পেছন থেকে গাড়ি চাপায় শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে। মধ্যের লেন বন্ধ হলে এ দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। তাই আগে রাস্তা প্রশস্ত করে ফুটপাথ তৈরি করা প্রয়োজন।

বোর্ডবাজার এলাকার ওয়ার্ড এশিয়া জ্যাকার্ড লি. পোশাক কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোকন উদ্দিন বলেন, বিআরটিএর বাস বেশি পরিমাণে দিয়ে লোকাল বাসগুলো নিয়ন্ত্রণে এনে নিয়মের মধ্যে চালানো হলে সে ক্ষেত্রে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতি যা আছে তাতে চলাচল ঠিক রয়েছে। যদি একটি কারখানার কাঁচামালের গাড়ি জ্যামে থাকে তা হলে শিডিউল প্ল্যান মিলবে না, সিপমেন্ট সঠিক সময়ে হবে না, এ ছাড়া পরিবহনের অতিরিক্ত তেল খরচসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আর যদি নিয়মশৃঙ্খলা মেনে ট্রাফিক ঠিকমতো কাজ করে যানজট কমাতে পারে তা হলে কোনো সমস্যা নেই। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান বলেন, বিআরটি লেনের ফেন্সিংয়ের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেমনÑকলেজ গেট, বোর্ডবাজার, ফেন্সিং দেওয়া হবে। পরিপূর্ণ ফেন্সিং যদি করা না হয় এবং বিআরটি স্টেশনগুলো যদি পরিপূর্ণভাবে তৈরি করা না হয় তবে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাত্রী কিংবা বিভিন্ন কলখানার শ্রমিক বা সাধারণ পথচারীরা সড়কের একপাশ থেকে অন্যপাশে পার হতে গেলে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। ফেন্সিং যখন হয়ে যাবে তখন যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হবে না। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হতে হবে। বিআরটি কর্তৃপক্ষ আরও অতিরিক্ত ১০টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছে। সেগুলা অচিরেই নির্মাণ হবে এবং ফেন্সিংও দেওয়া হবে। তখন সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে। এ ছাড়া বিআরটি লেনে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস চলবে। সড়ক শৃঙ্খলায় ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে সঙ্গে সঙ্গে প্রথম এক সপ্তাহ বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রট থাকবে। বিআরটি লেনে গাড়ি চলাচলের পড় যে সমস্যা দেখা দেবে সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিআরটি প্রকল্প পরিদর্শন শেষে জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিআরটি প্রকল্পে অনেক টাকা খরচ হয়েছে, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। বহুদিন ধরে মানুষ এর প্রতীক্ষায় আছে। এর একটা অবসান হওয়া উচিত। প্রাথমিকভাবে দুটি এসি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সড়কটি চালু হলেও বেশ কিছু সমস্যা থেকে যাবে। এক দিনেই সেসব সমস্যার সমাধান হবে না। এ মুহূর্তে সড়কের প্রতিটি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে, যা মানুষ পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আরও অতিরিক্ত ১০টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত ৯৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছরের জুনে এই প্রকল্প পুরোপুরি ফাংশনাল করা সম্ভব হবে।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়ামিন বলেছেন, প্রকল্পটি কবে চালু হবে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা ছিল। স্বল্প পরিসরে হলেও আজ উদ্বোধন করতে পারছি। শুরু হলে যেসব সমস্যা দেখা দেবে, সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে সমাধান করার চেষ্টা করব।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close