প্রকাশ: সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১:৩৬ এএম (ভিজিট : ৬৪)
আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের প্রতীক স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে বাংলার ঘরে ঘরে। এক নদী রক্ত, লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এ দিবস।
বিজয়ের লক্ষ্য ছিল এ দেশের মানুষ দুবেলা দুুমুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকবে। পাবে মাথার গোঁজার একটু নিরাপদ ঠাঁই। পাবে ন্যায়বিচার। থাকবে না কোনো বৈষম্য। লাল-সবুজের পতাকা অর্জনের পথ ধরে মানবতার স্বপ্ন দেখেছে দেশবাসী। স্বপ্ন দেখেছে সমান অধিকার পাওয়ার আর অর্থনৈতিক মুক্তির।
কিন্তু বিজয়ের কয়েক বছর না যেতেই সেই স্বপ্ন যেন আস্তে আস্তে চোখের সামনে থেকে বিলীন হতে থাকে। মানুষের মনে জন্ম নেয় হতাশা। সৃষ্টি হতে থাকে বৈষম্যের পাহাড়। শুরু হয় একে একে রাজনীতির পালাবদল। এসব পালাবদলে যে যেভাবে পেরেছে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি শুধু সাধারণ মানুষের, কৃষক-শ্রমিকের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাসক হয়ে উঠেছে স্বৈরাচার। তবে এ স্বৈরাচার আপামর মানুষের দ্রোহে-ক্ষোভে বেশিদিন টিকতে পারেনি।
কর্তৃত্ববাদী হয়ে দেশের মানুষের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো একনাগাড়ে বসেছিল রাজনৈতিক দল। শুধু বসেই ক্ষান্ত হয়নি। মানবতাবিরোধী কার্যক্রমে গুম, খুন, অত্যাচার করেছে। লুট করেছে জনগণের দেওয়া রাজস্বের অর্থ। মেগা প্রকল্পের নামে দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। দেশের মানুষকে একটুও স্বস্তি দেয়নি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে। বরং সাধারণ মানুষের পকেট কাটতে দফায় দফায় বাড়িয়েছে নিত্যপণ্যের দাম।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ব্যবসা-বাণিজ্য করে ভিন্ন মতের মানুষদের অধিকার হরণ করেছে। হা-পিত্যেশ করেছে দেশের সাধারণ মানুষ। মনে মনে বুক বেঁধেছে কখন আসবে সত্যিকার স্বাধীনতার অপার সুখ-শান্তি। প্রকৃত স্বাধীনতার অপেক্ষায় দিন গুনেছে দেশের মানুষ। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে শান্তিতে থাকার প্রহর গুনেছে তারা। অবশেষে এসেছে সেই দিন।
সেই দিনটি ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অবসান ঘটে প্রতীক্ষার। চারদিকে উল্লাসে ফেটে পড়ে দেশবাসী। সেই উল্লাস ছিল ফ্যাসিবাদের নাগপাশ ছিঁড়ে ফেলার। তাই অন্য বছরের তুলনায় এবারের বিজয় দিবসের স্বাদ ভিন্ন রকম। যেখানে বৈষ্যমের পুঁতিগন্ধ নেই। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সময় যে স্বপ্ন লালিত হয়েছিল, সেই স্বপ্নকে সফল করতে করতে নতুন রূপে এসেছে বিজয় দিবস।
এবারের বিজয় দিবসে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথে বলীয়ান সবাই। যে শপথের মূলে রয়েছে সব ধরনের বৈষম্যকে পরাভূত করার মন্ত্র। যে শপথের মর্মকথা সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক মুক্তির পথে নতুন করে বাংলাদেশকে অগ্রসর করা। সবার মত ও পথ এক বিন্দুতে মিলিত করে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়া। একাত্তরের পথ ধরে ২০২৪-এর নতুন বিজয়ের জন্য অসীম সাহসে যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে সেইসব অকুতোভয় তরুণের অবদানকে স্মরণে রেখে, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশ গড়ার দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যাবে আগামী প্রজন্ম, ফ্যাসিবাদ আর বৈষম্যহীন স্বদেশের বুকে প্রশান্তির নিশ্বাস নেবে দেশবাসী-সেই প্রত্যাশা নিয়ে হাজির হয়েছে এবারের বিজয় দিবস। নিশ্চয়ই সে প্রত্যাশা পূরণে প্রতিজ্ঞার পূর্ণ বাস্তবায়ন করবে বর্তমান প্রজন্ম।
সময়ের আলো/আরএস/