প্রকাশ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:১২ এএম (ভিজিট : ৪৮)
ইউরোপের দেশ জর্জিয়ার রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থা। দেশটির বিভিন্ন শহরে টানা ১৬ দিন ধরে চলছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নপন্থি প্রতিবাদ বিক্ষোভ। এরই মধ্যে শনিবার সেখানকার বিতর্কিত পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দিচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবের সাবেক ফুটবলার মিখাইল কাভেলাশভিলিকে (৫৩)।
এর ফলে সেখানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তাল হয়ে উঠবে বলে রিপোর্ট করেছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, বর্তমানে ক্রমবর্ধমান হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি। এই পার্টির সাবেক এমপি মিখাইল কাভেলাশভিলি।
প্রেসিডেন্ট পদে তিনি একমাত্র প্রার্থী। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক গ্রুপ তাকে প্রার্থী হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা পার্লামেন্ট বর্জন করেছে। তাদের দাবি অক্টোবরে যে নির্বাচন হয়েছে তা ছিল জালিয়াতির। প্রেসিডেন্ট পদে কাভালাশভিলিকে নির্বাচন করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির বিদায়ি প্রেসিডেন্ট সালোমে জুরাবিশভিলি। পশ্চিমাপন্থি বিদায়ি এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনিই জর্জিয়ার একমাত্র বৈধ পদাধিকারী।
ওদিকে জর্জিয়ার স্বার্থের ক্ষতি করার জন্য প্রেসিডেন্ট সালোমে জুরাবিশভিলিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি কোবাখিদজে। জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট সালোমের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৯ ডিসেম্বর। এরপর তাকে অবসরে যেতে হবে। শুক্রবার তিনি আরও বলেন, আমাদের শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে। ফলে পরিস্থিতিকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে অবশ্যই কোনো জটিলতা নেই। ওদিকে দলটির সহকর্মী নিনো টিসিলোসানি সাংবাদিকদের বলেছেন, জনগণের চোখে সালোমে জুরাবিশভিলি আর প্রেসিডেন্ট নন।
অক্টোবরে দেশটিতে নির্বাচন হয়। এর পরপরই জজিংয়ান ড্রিম পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। তা ২৮ নভেম্বর তীব্র আকার ধারণ করে। বলা যায়, বিস্ফোরণ ঘটে। কারণ এ সময় জরকার ঘোষণা দেয় যে, ২০২৮ সাল পর্যন্ত তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আলোচনা বন্ধ রাখছে। ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। কারণ ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পক্ষে। এটা সাংবিধানিকতার অংশও। সরকারের এমন ঘোষণার পর প্রতি রাতে পার্লামেন্টের মূল প্রবেশপথগুলোর বাইরে বিপুল পরিমাণ মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে। তাদের শরীর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পতাকায় ঢাকা। তারা নতুন নির্বাচন দাবি করছেন।
এমন অবস্থায় শনিবার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট হওয়ার কথা। দেশটির পার্লামেন্টে ইলেকটোরাল কলেজ সদস্য আছেন ৩০০। তারা সরাসরি ভোট দেবেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। এর মধ্যে আছেন সারা দেশে জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির প্রতি অনুগত স্থানীয় কর্মকর্তারাও। ভোটগ্রহণের আগে রাজধানী তিবলিশিতে প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, সরকারি কর্মক্ষেত্রের কর্মচারীরা, সৃষ্টিশীল শিল্পের পেশাদার, অভিনেতা ও আইনজীবীদের শুক্রবার থেকেই ডেকে জমায়েত করা হয়েছে। আইনজীবী ডেভিট কিকালেইশভিলি (৪৭) বলেছেন, আমরা সবার জন্য আইনি অবস্থান সৃষ্টির জন্য এখানে সমবেত হয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য সংবিধান ও মানবাধিকারের প্রতি সাংবিধানিক ধারাগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে।
কাভেলাশভিলি পিপলস পাওয়ার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। জর্জিয়াতে পশ্চিমাবিরোধী অপপ্রচারের মূল কন্ঠস্বর হিসেবে তিনি সুপরিচিত। তিনি বিদেশ থেকে বিরোধী দলগুলোকে রাষ্ট্রের পঞ্চম স্তম্ভ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জুরাবিশভিলি হলেন একজন 'চিফ এজেন্ট'। রাজনীতিতে প্রবেশ করে নেতৃত্বে অযোগ্য হন। এরপর জর্জিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের নেতৃত্ব পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কাভেলাশভিলি। কিন্তু যোগ্যতায় ব্যাপক ঘাটতি থাকার কারণে তাও পারেননি। যদিও তার দল অক্টোবরের নির্বাচনে জর্জিয়ান ড্রিম দলের পাশাপাশি নির্বাচন করেছে। তবে তারা এখন পার্লামেন্টে একটি সুস্থ বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ তিনি কথিত উগ্রবাদী বিরোধী দলকে বিদেশি শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ও দেশটির সাবেক এমপি বিদজিনা ইভানিশভিলি। অভিযোগ আছে এর মধ্য দিয়ে তিনি দেশটিকে আবার রাশিয়ার বলয়ে নিয়ে গেছেন।
সময়ের আলো/আরএস/