বিজয় দিবস এলেই জাতীয় পতাকার চাহিদা বাড়ে সারা দেশের ন্যায় ঝালকাঠিতেও। চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করতে দোকানিরাও বিভিন্ন সাইজের পতাকা মজুদ করেন। এছাড়া লাঠিতে করে পতাকা বেঁধে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা জেলা ও উপজেলা শহর ঘুরে বেড়ান। শুধু বিজয় দিবসই না, স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষেও থাকে প্রচুর চাহিদা। এ চাহিদা পূরণে জাতীয় পতাকা বিক্রেতারা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে দেদার বিক্রি করছেন পতাকা। কিন্তু যে পতাকা বিক্রি করা হচ্ছে সেগুলোর বেশির ভাগেরই মাপ ঠিক নেই।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ অনুযায়ী, জাতীয় পতাকার মাপ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০ : ৬। আয়তক্ষেত্রাকার গাঢ় সবুজ রঙের পতাকার মাঝখানে থাকবে একটি টকটকে লাল বৃত্ত। বৃত্তটি পতাকার দৈর্ঘ্যরে এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট হবে। এ ছাড়া ভবন অনুযায়ীও জাতীয় পতাকার মাপের তারতম্য রয়েছে। তবে বেশিরভাগ দোকানেই সুনির্দিষ্ট মাপের নিয়ম মানা হচ্ছে না। মাপের ক্ষেত্রে ১০:৬ এবং রঙের ক্ষেত্রে গাঢ় সবুজের উপরে লাল টকটকে বৃত্ত দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও পতাকা তৈরির কারিগররা সঠিক মাপের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
বাজারে ভুল মাপের পতাকাই দেদার বিক্রি হচ্ছে। দোকানিরা বলছেন, আমরা নিজেরা পতাকা বানাই না, আমাদের কাছে নিয়ে এলে কিনে তা বিক্রি করি।
সরেজমিন ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন স্থান ও উপজেলা শহর ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি এলাকায় ১০ থেকে ১২ জন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন। এসব বিক্রেতার কাছে থাকা পতাকাগুলোর বেশিরভাগই ভুল মাপে তৈরি। এ ছাড়া কাপড়ের দোকানিরাও যে পতাকা বিক্রি করেন তারও মাপ সঠিক নেই। এসব পতাকা ব্যবসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিরা কিনছেন। বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) উপলক্ষে এসব ভুল মাপের পতাকা টানানো হয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জাতীয় পতাকার সঠিক মাপের বিষয়টি সম্পর্কে ক্রেতা-বিক্রেতা অনেকেরই তেমন ধারণা নেই। এ ছাড়া মাপের ব্যাপারে প্রশাসনের তদারকিও নেই।
শহরের বড় বাজারের সামনে কালীবাড়ি রোডে পতাকা বিক্রির সময় কথা হয় ভ্রাম্যমাণ পতাকা বিক্রেতা আকাশ, হাসান, সুজন ও জহুরুলের সঙ্গে।
তারা প্রত্যেকেই বলেন, পতাকার আকারের মাপ ঠিক রাখার বিষয়টি তারা কেউই ভালোমতো বোঝেন না। তারা শুধু বোঝেন লাল-সবুজের পতাকা হলেই হলো। ক্রেতারাও কখনো পতাকার মাপের ব্যাপারে তাদের কোনো প্রশ্ন করেননি বলে জানান। তারা আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখসহ জাতীয় বিভিন্ন দিবস সামনে রেখে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে পতাকা-ফেস্টুন ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন। এসব দিবসে পতাকার চাহিদা বেড়ে যায়।
পতাকা কেনার পর দুজন ব্যবসায়ী বলেন, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পতাকা টাঙানো বাধ্যতামূলক। আগের পতাকা পুরোনো হওয়ায় তারা এবার নতুন পতাকা কিনেছেন। পতাকার মাপ ঠিক আছে কি না সে বিষয়টি তারা ভাবেননি।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যবান সেন গুপ্ত বলেন, ‘লাল-সবুজের পতাকার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি। যেহেতু পতাকার মাপ ও রঙ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। তাই ভুল মাপের পতাকা টাঙানো দেখলে কষ্ট লাগে।’ এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুল রঙ ও মাপের পতাকা বিক্রি বা টাঙানো দুটোই অন্যায়।
সঠিক মাপের পতাকা ব্যবহারের বিষয়টি তদারকির জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা সভায়ও আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি আমি দেখব।’
সময়ের আলো/আরএস/