রাজনীতির বাইরে প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ভিন্নধর্মী এক আয়োজন করেছে বিএনপি। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাওঁয়ের এলজিইডি-আরডিইসি ভবনের মিলনায়তনে প্রতিবন্ধী নাগরিকদের মতবিনিময় সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে খাতওয়ারি সমস্যা ও দাবি দাওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রতিবন্ধি ব্যক্তিরা। নারীরা গণ পরিবহনে আসন সমস্যা ও প্রবেশাধিকার নিয়ে কথা বলেন। সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধি কোটা ও ভাতা বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতি চান তারেক রহমানের কাছে। জবাবে তারেক রহমান ক্ষমতায় গেলে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভাতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
মুক্ত আলোচনায় বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, অটেস্টিক প্রতিবন্ধীরা তাদের দুঃখ-বেদনা এবং প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইনের সংশোধনসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, প্রতিবন্ধীরা এক নন। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই ‘আগামীর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা হবে।
অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, আমরা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সক্ষম সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে চাই। আমি ও আমার দল বিএনপি উপলব্ধি করি আপনাদের সমস্যা ও কষ্টগুলো বাস্তব এবং গভীর। আপনাদের মনে রাখতে হবে এই বাস্তবতায় আপনারা একা নন। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি, আপনাদের পাশে ছিলাম, ইনশাল্লাহ আপনাদের পাশে আমরা থাকব। কারণ আপনাদের প্রতিবন্ধতা আমাদের সবার প্রতিবন্ধকতা।
তারেক রহমান বলেন, আমরা সকলে বিশ্বাস করি আমরা আপনাদের পেছনে রেখে আমরা কখনো এগিয়ে যেতে পারব না। আর এগুতেও আমরা চাই না। আমরা সবাই মিলে একসাথে যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব সেটি হবে সবার জন্য ফেয়ার, সবার জন্য ইনক্লুসিভ, সবার জন্য বসবাসযোগ্য এবং সবার জন্য উপভোগ্য যেন হয়। আমাদের প্রতিশ্রতি হলো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের মান উন্নয়নে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহন করা।
আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিবন্ধীদের সমস্যা সমাধানের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গঠন, জেলা সদর হাসপাতালসমূহে বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল হেলথ ক্লিনিক চালু, প্রতিবন্ধীদের সহায়ক উপকরণসমূহ দেশে তৈরির কারখানা স্থাপন, প্রতিবন্ধী শিশুদের শারীরিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে প্রশিক্ষন ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রান্তিক থেকে কেন্দ্রীয় পর্যন্ত খেলাধুলার সিস্টেমেটিক ডেভেলপমেন্ট এবং টূর্ণামেন্টের মাধ্যমে প্যারা অলিম্পিকের সহায়তা করা হবে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
প্রতিবন্ধীদের সাফল্য হিসেবে পটুয়াখালী একজন বাক প্রতিবন্ধী, একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীর মৌলভীবাজারে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং কুমিল্লার একজন চলার শক্তিহীন প্রতিবন্ধীর কাজ করে করে অর্থ উপার্জনের চারটি গল্প তুলে ধরে তারেক রহমান। তিনি বলেন, তাদের গল্প আমাদেরকে শিখিয়েছে বাধা শুধু একটি শব্দ যা চেষ্টার মাধ্যমে জয় করা সম্ভব। আমাদের দায়িত্ব্ তাদের লড়াইকে সন্মান জানানো, তাদের পাশে দাঁড়ানো। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই বা গড়ার পরিকল্পনা করি যেখানে প্রতিটি মানুষ তার সীমাবন্ধতাকে জয় করে নিজের স্বপ্ন পুরনের সুযোগ পাবে।শারীরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা্ করেও যারা নিজ উদ্যোগে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন তাদের বিজয়ের গল্প আমাদের আলোর পথ দেখায়। আমি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে শারীরিক সীমাবন্ধতার কারণে যেন কাউকে বৈষম্যের শিকার না হতে হয়, পিছিয়ে না রাখে।
বিগত ১৬ বছরের মানুষজন বঞ্চনা, অবহেলা ও নির্যাতনের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিএনপি ভবিষ্যতে জনগনের সমর্থনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে থাকব।
অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের বক্তব্য শুনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে এখানে এসে আমার কাছে নতুন জগত উন্মোচিত হয়েছে, এখানে না আসলে এর সাথে পরিচিত হতে পারতাম না। আমরা আপনাদের সহযাত্রী। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আপনাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবন্ধী নাগরিক পরিষদের সালমা মাহবুব এবং ইফতেখার মাহবুবের সঞ্চালনায় এই মতবিনিময় সভায় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক পারভেজ রেজা কাকন, মানবাধিকার কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, সাংবাদিক নেতা সাঈদ খানসহ দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সময়ের আলো/এম