ই-পেপার সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

শীতে বাঘের আলসেমি
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:৪৬ এএম  (ভিজিট : ১০৮)
শীতের সকালে বনের পরিবেশটা একদম অন্যরকম হয়ে ওঠে। গাছের পাতা মেটে রঙে রঙিন হয়ে ওঠে, নদীজলে শিশির জমে থাকে, আর চারপাশে কুয়াশার চাদর ঢেকে যায়।

বনের সকল প্রাণী শীতের আমেজে আনন্দে মেতে ওঠে; কিন্তু বনের রাজা বাঘ, ঝংকার, একদম অলস হয়ে পড়ে। অন্য সময় বাঘের গর্জনে বনে সবাই তটস্থ থাকে, কিন্তু শীতে ঝংকার কেবল গুহার কোণে শুয়ে থাকে। তার ন্যাচারাল খেয়াল-খুশির মতো ঘুম আর অলসতা যেন শীতের প্রকৃতির সঙ্গে মিলে যায়।

বনের অন্যান্য পশুপাখিরা শীতের সকালে রোদ পোহাতে পোহাতে একে অপরের সঙ্গে গল্প করছে। বানর দুলু, যাকে সবাই বনের দুষ্টু পুঁচকেও বলত, শিগগির বুঝে গেল যে ঝংকার অনেক দিন ধরেই অলস হয়ে বসে আছে। সে হেসে বলল, ‘এই শীতে বাঘের আলসেমি দেখে তো আমি হাসিই থামাতে পারছি না!’ হরিণ চঞ্চল স্বভাবের বলে, ‘হ্যাঁ, ঝংকার তো পুরো বুড়ো হয়ে গেছে! শীত এলেই শিকার করা ছেড়ে দেয়!’ সব পশু মজা করে ঝংকারের পেছনে কথা বলছিল, কিন্তু বাঘের কান পর্যন্ত তাদের কথাগুলো পৌঁছালো। ঝংকার হঠাৎ রেগে গিয়ে ঘুম ভেঙে বলে, ‘অন্তত আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দাও, সবাই খুব কথাবার্তা বলে!’

বানর দুলুর মাথায় তখন এক দুষ্টু বুদ্ধি এলো। সে ভাবল, ‘আচ্ছা, ঝংকারকে একটু মজা শেখানো যাক! ওকে দেখিয়ে দেওয়া যাক শীতকালে আলসেমি না করে কীভাবে মজা করা যায়।’ বানর দলকে ডেকে এনে বলল, ‘আমরা বাঘকে কিছু মজা শেখাবো। এভাবে অলস হয়ে বসে থাকলে তো শীতেও কিছু করা হবে না!’ সবাই মিলে চুপিসারে একটা কুমড়ো কেটে তার মধ্যে মধু মাখিয়ে রাখল। কুমড়োটা বনের মাঝখানে রেখে তার ওপর মধু মাখিয়ে দিল। তারপর সবাই ঝোপের আড়ালে চলে গেল।

ঝংকার তার গুহা থেকে বেরিয়ে এসে মধুর গন্ধ পেল। সে গন্ধ পেয়ে অদ্ভুতভাবে কুমড়োর কাছে চলে গেল এবং মধু খেতে শুরু করল। কিন্তু হঠাৎ কুমড়োর ভেতর থেকে পানি ঝরতে শুরু করল। ঝংকার কুমড়ো থেকে পানি পড়তে দেখে ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠে চেঁচিয়ে বলল, ‘ওহ! এটা কী হলো?’ বানর দুলু গাছের ডাল থেকে হেসে বলল, ‘রাজা মহাশয়, এই হলো শীতকালেও মজা করার রাস্তা!’ বাকি পশুরাও হেসে গড়িয়ে পড়ল। ঝংকার প্রথমে রেগে গেল, কিন্তু পরে সে ভাবল, ‘হ্যাঁ, সত্যিই তো! আমি কেমন অলস হয়ে গিয়েছিলাম!’

পরদিন সকালে, ঝংকার নিজেই সবার সামনে এলো এবং ঘোষণা করল, ‘আজকে আমি শিকার ধরব। দেখিয়ে দেব যে আমি এখনও আগের মতোই বনের রাজা!’

সে বনের পশুদের সঙ্গে শিকার করতে গেল। সবাই অবাক হয়ে গেল, কারণ ঝংকার এতদিন যে অলস হয়ে গিয়েছিল, সে আবার আগের মতো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সে দুর্দান্তভাবে শিকার ধরল এবং পরে বনবাসীদের সঙ্গে একসঙ্গে সেই শিকার রান্না করে খেয়েছিল। বনের সব প্রাণী মিলে আনন্দ করল।

ঝংকার তার আলসেমি কাটিয়ে বুঝতে পারল, শীতকালে অলস থাকাটা ভালো নয়। জীবনে যদি মজা আর সফলতা চাও, তবে কোনো সময়েই অলসতা থাকা উচিত নয়। শীতকালে, যখন সবাই রোদ পোহাচ্ছিল, ঝংকারও তার নিজের শক্তি আর উদ্যমে নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠল। বনবাসীরা আবার তাকে শ্রদ্ধা করে দেখল এবং বনের মাঝখানে এক উৎসবের মতো পরিবেশ তৈরি হলো।

এই গল্পটা আমাদের শেখায় যে অলসতা কখনোই ভালো ফল দেয় না। সক্রিয় থাকতে পারলে জীবনে আনন্দ আসে এবং শীতের মতো কঠিন সময়ে যদি আমরা মনের উদ্যম ধরে রাখি, তবে আমাদের জীবনে সবকিছু সহজ হয়ে যায়।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close