প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২:০৩ এএম (ভিজিট : ১৪২)
দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে অনেকেরই। কিন্তু দেখার চোখ সবার সমান নয়। সবাই ভ্রমণকাহিনী লেখেন না বা লিখতে পারেন না। আবার অনেকে লিখলেও সেগুলো সুখপাঠ্য ভ্রমণ সাহিত্য হয়ে ওঠে না। কিন্তু কোনো কোনো ভ্রমণকাহিনী পড়তে বসে পাঠক অনায়াসে হয়ে ওঠেন লেখকের সফরসঙ্গী। পড়তে পড়তে মনোযোগী পাঠকের মনে হবে ভ্রমণ স্পটগুলো তিনি নিজেই দেখছেন ঘুরে ঘুরে। এমনই একটি ভ্রমণ-সাহিত্যের বই ‘নেরুদা ও আলেন্দের দেশে’।
বইয়ের নাম থেকেই বোঝা যায়, এটি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলি ভ্রমণের কাহিনী। বইটিকে নিরেট কাহিনী না বলে, বলা উচিত ভ্রমণ-সাহিত্য। চিলি বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরের দেশ হলেও শিক্ষিত ও সচেতন বাঙালির কাছে অপরিচিত নয় দেশটির নাম। চিলির নোবেলজয়ী কবি পাবলো নেরুদার কবিতার সঙ্গেও পরিচয় আছে অনেকেরই। চিলি নামটাও বেশ চিত্তাকর্ষক।
ইংরেজি চিলি শব্দের অর্থ মরিচ। নামের বিষয়টি লেখক তার পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করে নিয়েছেন খুব মজা করে। বইয়ের প্রথম লেখাটির শিরোনাম ‘যখন চিলি মানে মরিচ না’। অত্যন্ত সরস ভাষায় লেখক মাহফুজুর রহমান আকাশপথে দীর্ঘযাত্রার বিবরণ দিয়েছেন। বিমানে তাবাস্কো সসের বোতল সাবাড় করে বিদেশি বিমানবালাকে অবাক করে দেওয়ার গল্পটিও বলেছেন সকৌতুক। চিলির ভূগোলের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেন তিনি সাবলীল বর্ণনায়। প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ের এক চিলতে দেশ চিলির অর্থনীতির মজবুতির খবরও জানা যায় এই বই পড়ে।
দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ চিলি। তামা ও মদের জন্য চিলির সবিশেষ পরিচিতি রয়েছে। দেশটির অর্থনীতির সারসংক্ষেপ এই লেখক তুলে এনেছেন গল্পচ্ছলে।
বইয়ের নাম নিয়ে কথা বলছিলাম আলোচনার শুরুতেই। আলেন্দে ও নেরুদার নাম উচ্চারিত হয় একই সঙ্গে। আলেন্দের বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মী কবি পাবলো নেরুদা। সালভেদর আলেন্দে সমাজতন্ত্রী হলেও তিনি চেয়েছিলেন গণতান্ত্রিক পন্থায় সমাজতন্ত্রে উত্তরণ। পাবলো নেরুদা ছিলেন তার
সমর্থক ও সহযাত্রী।
১৯৭৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আলেন্দের সরকার উৎখাত করা হয়। প্রেসিডেন্ট আলেন্দে অভ্যুত্থানকারী সৈন্যদের সঙ্গে লড়াই করেছেন জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও। তিনি আত্মসমর্পণ কিংবা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চাইতে লড়াই করে মৃত্যুই শ্রেয় বিবেচনা করেছিলেন। ঠিক কীভাবে আলেন্দের জীবনাবসান ঘটেছিল তা এখনও রহস্যাবৃত; যদিও দাবি করা হয় যে শেষ মুহূর্তে তিনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলেন। এই বইয়ে পাঠকের জন্যে রয়েছে আরও একটি অসাধারণ প্রাপ্তি। সেটি হচ্ছে আলেন্দের শেষ ভাষণ, যার প্রতিটি শব্দ ও বাক্য মানুষকে স্পন্দিত করে, উদ্দীপিত করে। সেই বক্তৃতার কয়েকটি বাক্য- ‘আজ না হয় কাল, মানুষ মুক্ত হবেই। সুন্দর দিন আসবেই। চিলি দীর্ঘজীবী হোক।’
ছোট-বড় মিলিয়ে কুড়িটি আখ্যানের মাধ্যমে সহজ সরল ভাষায় লেখক উন্মোচন করেছেন চিলির ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্থাপত্যকলা ও ভূগোল। বাদ যায়নি অর্থনীতিও। তিনি পাঠককে নিয়ে যান দ্রষ্টব্য জায়গাগুলোতে আর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন সবকিছুর সঙ্গে।
গ্রন্থের শেষে জুড়ে দেওয়া হয়েছে রঙিন আলোকচিত্রের অ্যালবাম। অ্যালবামে পাওয়া যাবে চিলির অনেক দুর্লভ ছবি। ঝকঝকে ছাপা আর দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদে মোড়ানো বইটির দাম রাখা হয়েছে চারশ টাকা মাত্র। বইটি পাঠকপ্রিয়তা লাভ করবে নিঃসন্দেহে।