চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পরকীয়া সম্পর্কের জেরে করা অগ্নিসংযোগে ১৩ বসতঘরের সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এসব ঘরে ১২টি পরিবার বসবাস করতো। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লক্ষাধিক টাকা বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ঘটনায় ছালেহা বেগম নামে এক গৃহবধূ আহত হয়েছেন। তাকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত প্রেমিক বাবুলকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ৩টা ২০ মিনিটের সময় চাম্বল ইউনিয়নের পশ্চিম চাম্বল জয়নগর পাড়া এলাকায় ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি টিম পৌঁছালেও ততক্ষণে সর্বস্ব পুড়ে যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পশ্চিম চাম্বল জয়নগরপাড়া এলাকার হারুনুর রশীদ ওরফে হারুন বৈদ্য’র ছেলে বাবুলের সাথে প্রতিবেশী রেজাউল করিমের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। পরকীয়ার জেরে ২ বছর ধরে ঝগড়া চলে আসছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে প্রকাশ্যে লম্পট বাবুল রেজাউল করিমের ঘরে অগ্নিসংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করলে লোকজনের সহায়তায় তাকে নিভৃত করা হলেও গত রাতে ওই যুবক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মুহুর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা আশেপাশের বসতঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১২ পরিবারের সদস্যরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন একই এলাকার লেদু মিয়ার ছেলে মো. মিয়া, মো. এহছান, সিরাজ মিয়ার ছেলে মো. কালু, নবাব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, মো. ইসমাঈল, মো. ইসহাক, কালু মিয়ার ছেলে মো. করিম, ইসলাম মিয়ার ছেলে মো. জামাল উদ্দিন, মো. কবির, আবদু সাত্তার, আবদু ছবুর ও আবদুল্লাহর ছেলে হারুনুর রশীদ।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একজন কালুর স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, আমার পরনের কাপড় ছাড়া সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার স্বামী ফিশিং ট্রলারে কাজ করেন। তিনি কিস্তি পরিশোধের জন্য ৫০ হাজার পাঠিয়েছেন। টাকাগুলো উদ্ধার করতে গিয়ে আমার মুখে আগুন লাগে। কিন্তু টাকা উদ্ধার করতে পারিনি। হারুন বৈদ্যর ছেলে বাবুল এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
ইমরান নামের এক স্কুল ছাত্র বলেন, আমার বার্ষিক পরীক্ষা চলতেছে। আজ বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু বইপুস্তক ও সার্টিফিকেট পুড়ে যাওয়ায় পরীক্ষা দিতে যাইনি।
গাড়ি রক্ষা করতে গিয়ে আহত ছালেহা বেগম বলেন, কিস্তির টাকায় একটি অটোরিকশা কিনেছিলাম। এটি ছিল আমার একমাত্র সম্বল। গাড়িটি আগুন থেকে রক্ষা করতে গিয়ে আমার কপালের একাংশ পুড়ে গেছে। কিন্তু গাড়ি রক্ষা করতে পারিনি। আমি লম্পট বাবুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শহিদ উল্লাহ বলেন, বাবুলের সঙ্গে স্থানীয় করিমের স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। ছেলেটি স্থানীয় আরও কয়েকজন যুবতীর সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি সালিশ বিচারের কথা থাকলেও শুনলাম গতরাতে ওই ছেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে।
বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল স্টেশনের ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছি। আমাদের আলাদা দু’টি টিম অগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় আমাদের গাড়ি পৌঁছাতে দেরি হয়েছে।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, উত্তেজিত জনতা থেকে বাঁচাতে বাবুল নামের এক যুবককে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাটি নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখতেছি আমরা। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি।
সময়ের আলো/জেডআই