বাংলাদেশ নিয়ে থামছে না ভারতীয় মিডিয়ার নির্জলা মিথ্যাচার। চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আবারও পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ার খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের শেখানো বুলি আওড়াতে হলো ঊষা রানী রায় নামে নড়াইলের এক ষাটোর্ধ্ব হিন্দু নারীকে। মাত্র তিন দিন আগে পেট্রাপোলে একই কায়দায় নড়াইলের খুকু রানী নামে এক নারীকে দিয়েও বানোয়াট বয়ান দেওয়ায় সেখানকার হলুদ সাংবাদিকরা। ভারতীয়া মিডিয়ার নৈতিকতা বিবর্জিত অপসাংবাদিকতায় চরম বিব্রত নড়াইলের হিন্দু সংখ্যালঘুরা।
এদিকে ঊষা রানী ভারত থেকে এক ভিডিও বার্তায় জানান, সাংবাদিকরা তাকে আটকে রেখে বাধ্য করে মিথ্যা কথা বলতে।
ভারতের টেলিভিশন এপিবি আনন্দে প্রচার হওয়া ঊষা রানী রায়ের বক্তব্য যে নিরেট প্রপাগান্ডা তার প্রমাণ মিলল ঊষা রানীর নিবাস নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামে গিয়ে। গ্রামজুড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দু-মুসলাম নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে চলছে পাঠদান, খেলাধুলা। স্বাভাবিক নিয়মে চলছে পূজা-অর্চনাসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম। গ্রামবাসী জানায়, পূর্ব পুরুষের আমল থেকেই তারা হিন্দু-মুসলমান পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে শান্তিতে বসবাস করছে চাকুলিয়া গ্রামে। এ গ্রামের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা গ্রাম্য চিকিৎসক সুবাস রায়ের স্ত্রী সাবেক সংরক্ষিত ইউপি সদস্য ঊষা রানী গত ৭ ডিসেম্বর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যান। সেখানে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পেরিয়ে ওপারে পৌঁছতেই তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের খপ্পরে পড়েন। তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আটকে রেখে বাধ্য করা হয় বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়নের মিথ্যা বক্তব্য দিতে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের এমন ন্যক্কারজনক মিথ্যাচারে বিব্রত ঊষা রানীর স্বজন ও এলাকাবাসী। ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচারের নিন্দা জানান ঊষা রানীর স্বামী সুবাস রায়।
তিনি বলেন, আমরা এখানে হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে বসবাস করছি। জামায়াত, বিএনপি, ছাত্রশিবির আমাদের পূজা-অর্চনাসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে। দুর্গাপূজার সময় বিএনপি-জামায়াতের লোকজন আমাদের সঙ্গে থেকে পূজামণ্ডপ পাহারাসহ আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে।
ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, নেট দুনিয়ায় বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর তাৎক্ষণিক আমরা দলীয় নেতাকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে কাজ করছি। এ ইউনিয়নে সম্প্রীতির বন্ধন অটুক রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের নেতা, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নড়াইল জেলার সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. মতিয়ার রহমান এই মিথ্যা খবর প্রচারিত হওয়ার পর এলাকায় যেন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয় সে জন্য আমরা সজাগ আছি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ পাখি বলেন, আমার ইউনিয়নে জানা মতে এই এলাকায় হিন্দুদের কোনো ক্ষতি হয়নি। বিগত দুর্গাপূজায় জামায়াত, শিবির, বিএনপির নেতৃবৃন্দ এলাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পাহারা দিয়েছে। এখানে সবাই মিলেমিশে আছি। আমার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ঊষা রানী রায়কে ভারতে জোর করে মিথ্যা বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের বোড়ামারা গ্রামের খুকু রানী বিশ্বাসকে দিয়েও মিথ্যা বলায় কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যম। বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলাম অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে ভারতীয় মিডিয়ার হীন চক্রান্ত রুখতে সে দেশের সরকার ও জনগণ আশু ব্যবস্থা নেবে এ দাবি দেশপ্রেমিক প্রতিটি বাংলাদেশির।