কুমিল্লা নগরীর একটি ম্যুরালে স্থাপন করা কুমিল্লার কৃতি সন্তান ও নারী জাগরণের পথিকৃৎ নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের কালো কালি মাখা বিকৃত ছবি পরিষ্কার করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা আবদুর রাজ্জাক।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর সার্কিট হাউজ মোড় এলাকায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের পিস্তলের বাটের আঘাতে তিনি আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। চিকিৎসার জন্য তিনি নগরীর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আবদুর রাজ্জাক বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কুমিল্লা জেলা শাখার সমন্বয়ক। এছাড়াও তিনি সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির পদে আছেন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর উদ্যোগে সার্কিট হাউজ মোড়ে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন ম্যুরালে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ড. আখতার হামিদ খান, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার রফিকুল ইসলামের ছবিসহ বেশ কিছু প্রয়াত খ্যাতিমান ব্যক্তির ছবি স্থাপন করা হয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় কুমিল্লা নগরীর বেশ কিছু সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ও ম্যুরালে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা থেকে রক্ষা পায়নি নগরীর সার্কিট হাউজ মোড়ে স্থাপিত ম্যুরালটিও। সেখানে থাকা প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবির মধ্যে নবাব ফয়জুন্নেছা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের ছবি কালো কালিতে বিকৃত করা হয়। কিন্তু গত চার মাসেও ছবি দুটি পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে ছবি দুটি পরিষ্কার করতে গিয়ে হামলার শিকার হন বাসদ নেতা আবদুর রাজ্জাক।
আহত বাসদ নেতা বলেন, সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে তিনি একাই ছবি দুটি পরিষ্কার শুরু করেন। এ সময় ৭/৮ জন ব্যক্তি এসে তাকে ঘিরে ফেলেন। ৪০/৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বেগম রোকেয়া ও ফয়জুন্নেছাকে আপত্তিকর ভাষায় গালাগালি শুরু করেন। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ওই দুই নারীই দেশের নারীদের শেষ করেছে। রফিকুল ইসলামের নাম নিয়ে বলেন, সে কীসের মুক্তিযোদ্ধা; আসল মুক্তিযুদ্ধ তো হয়েছে গত ৫ আগস্ট।’ এ সময় রাজ্জাক ওই ব্যক্তির আপত্তিকর এসব কথার প্রতিবাদ জানালে তাকে মারধর শুরু করা হয়।
এক পর্যায়ে পিস্তল বের করে এর বাট দিয়ে চোখের বাম পাশে আঘাত করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এ সময় তাকে কিল ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করা হয়।
আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, ওই ব্যক্তি পিস্তল তাক করে বলেন, একবারে গুলি করে মেরে ফেলবো।
তবে গুলি করার সময় হামলাকারীর সঙ্গে থাকা অন্য লোকজন তাকে রক্ষায় সামনে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি রক্ষা পান। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। কারা ওই হামলায় জড়িত তা শনাক্ত এবং আটকের চেষ্টা চলছে।
সময়ের আলো/জেডআই