ই-পেপার সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫
সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫

আবাসিক এলাকায় সিসা কারখানা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫:২৮ এএম  (ভিজিট : ৪০৪)

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চরকালীবাড়ি চায়নামোড় এলাকায় ‘মণ্ডল করপোরেশন’ নামে গড়ে উঠেছে একটি সিসা তৈরির কারখানা। আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা এ কারখানার পাশেই রয়েছে ফসলি জমি। সিসা গলানোর সময় এর বিষাক্ত ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের গ্রামগুলোয়। এতে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন লোকজন। অকালেই ঝরে পড়ছে গাছের পাতাসহ ফলদ বৃক্ষের ডাব, নারিকেল ও আম-জাম। কারখানার আশপাশের জমির ঘাস খেয়ে গবাদিপশু মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। গত বছরের জুনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র পায় কারখানাটি। এর আগে কয়েক বছর ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানাটি চালু রাখা হয়। চলতি বছরের জুনে ছাড়পত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বর্তমানে নবায়ন ছাড়াই চলছে এ কারখানা।

সরেজমিন দেখা যায়, কারখানার সামনের সড়কটি বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে প্রবেশের একমাত্র সড়ক। সড়কটি ব্যবহার করে অগণিত মানুষ চলাচল করছেন। কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে শ্রমিকরা পুরোনো ব্যাটারি খুলে বের করছেন ভেতরের পাত। পরে ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করে সংরক্ষণ করছেন। চুল্লির মধ্যে কাঠ ও কয়লায় অ্যাসিড মিশ্রিত ব্যাটারির বর্জ্য বা প্লেট সাজানো হচ্ছে। এরপর আগুন ধরিয়ে তা গলানোসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সিসা তৈরি করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চালু থাকে কারখানাটি। মাঝেমধ্যে বিকাল থেকেই চালু করা হয়। বিষাক্ত সিসা গলানোর সময় এর ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ চরকালীবাড়ি, চরঝাউগড়া, দক্ষিণপাড়া, চরগোবদিয়া, চর ঈশ্বরদিয়া, শম্ভুগঞ্জ বাজার ও রঘুরামপুরসহ আশপাশের গ্রামগুলোয় ছড়িয়ে পড়ছে। তখন দুর্গন্ধে টেকা যায় না। অনেকের বমি হয়। জমির ঘাস খেয়ে গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। কারখানার ধোঁয়া ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকার মানুষ। ঝরে পড়ছে গাছের পাতা, ডাব, নারকেল ও আম-জাম। কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য কৃষিজমিতে পড়ায় কমছে ফসল উৎপাদন। কারখানাটি বন্ধ করতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন, কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না কারখানাটি।

চরকালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাইদুল মিয়া বলেন, দুর্গন্ধ ও ধোঁয়ার কারণে বাসার দরজা-জানালা খোলা যায় না। এলাকার অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে এলাকার লোকজন এই কারখানা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া মেলেনি স্থায়ী কোনো সমাধান।

চরঝাউগড়া এলাকার কৃষক আবদুল কুদ্দুস বলেন, কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া পড়ছে কৃষিজমিতে। এতে জমিতে ফসল কম হচ্ছে। জমির ঘাস খেয়ে অনেকের গবাদিপশু অসুস্থ হয়েছে। আশপাশের এলাকার গরু মারা গেছে।

শম্ভুগঞ্জ ইউসি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসমাইল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের এলাকার গাছের নারিকেল, আম-জাম, কাঁঠাল ও নানা ফল টিকছে না। গাছের পাতা পর্যন্ত ঝরে পড়ছে। বিষ ছড়ানোর এই কারখানা দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন।

চাহিদার সব কাগজপত্র জমা দিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন নিয়েই কারখানা পরিচালনা করছেন উল্লেখ করে মণ্ডল করপোরেশনের মালিক মোশাররফ হোসেন বলেন, নিয়ম মেনে কারখানা গড়ে তুলেছি। কারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্যে কারও ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে হয় না।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, চুল্লিতে গলানো সিসা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে।

ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কারখানার ধোঁয়ায় হেভি মেটাল থাকায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি বিষাক্ত হওয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে। এ কারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য থেকে মানুষের ক্যানসার হতে পারে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, এর আগে কারখানার মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। এবার স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close