ই-পেপার রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

২৪ বধ্যভূমির ২০টিই অরক্ষিত
প্রকাশ: সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৪:২৭ এএম  (ভিজিট : ২৬৮)
১৯৭১ সালে ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা মুক্তিকামী, মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ জনসাধারণকে ধরে নিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫৩ বছরে এখন পর্যন্ত ২৪টি বধ্যভূমি ও একটি গণকবর শনাক্ত করা হয়েছে। চারটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলেও বেশিরভাগই সংরক্ষণে সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেই। তবে স্থানীয় উদ্যোগে কয়েকটি জায়গায় নামফলক বসানো হয়েছে। জেলার বেশিরভাগ বধ্যভূমি অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকায় ক্ষুব্ধ শহিদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধারা।

ঝালকাঠিতে শনাক্ত হওয়া বধ্যভূমিগুলো হচ্ছে-সদর উপজেলার পৌর খেয়াঘাট বধ্যভূমি, পালবাড়ী গোডাউন ঘাট বধ্যভূমি, সচিলাপুর বধ্যভূমি, গাবখান বধ্যভূমি, ডুমুরিয়া বধ্যভূমি, ভীমরুলি বধ্যভূমি, শতদশকাঠি স্মৃতিলক্ষ্মী বালিকা বিদ্যালয় বধ্যভূমি, জগদীশপুর বধ্যভূমি, রামানাথপুর বধ্যভূমি, বেশাইনখান বধ্যভূমি, খায়েরহাট বধ্যভূমি, খাজুরিয়া গাইনবাড়ী বধ্যভূমি, কালীদাশ বাড়ি বধ্যভূমি, কুনিহাড়ি বধ্যভূমি, নবগ্রাম নাপিতখালী বধ্যভূমি, বেরমহল বধ্যভূমি, গুয়াটন বধ্যভূমি; নলছিটি উপজেলার ষাটপাকিয়া ফেরিঘাট বধ্যভূমি, রাজপাশা বধ্যভূমি, তামাকপট্টি বধ্যভূমি, মানপাশা ঋষিবাড়ী বধ্যভূমি, রাজাপুর উপজেলার বাঘরী থানাঘাট বধ্যভূমি, কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়ার বাঁশবুনিয়া দাশের বাড়ি বধ্যভূমি ও আওড়াবুনিয়া হাই স্কুল মাঠ বধ্যভূমি। এ ছাড়া রাজাপুরে রয়েছে দক্ষিণ কাঠিপাড়া গণকবর। রাজাপুর শহরের গোডাউন ঘাট বধ্যভূমির জায়গাটি এখনও চিহ্নিত হয়নি।

রাজাপুর বাঘরী থানাঘাট বধ্যভূমিতে উপজেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। নলছিটির ষাটপাকিয়া ফেরিঘাট বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ হয়েছে পৌরসভার উদ্যোগে। ঝালকাঠি পৌর খেয়াঘাট বধ্যভূমিতে জেলা পরিষদের অর্থায়নে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে।

ঝালকাঠির বধ্যভূমিগুলোর তথ্য মেলে সুকুমার বিশ্বাস রচিত ‘একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর’, ‘মুক্তিযুদ্ধে বরিশাল’ এবং সিরাজ উদ্দিন আহমেদ রচিত ‘বরিশালের ইতিহাস’ বইয়ে। ঝালকাঠি শহরের সুগন্ধা নদীর পাড়ে পৌর খেয়াঘাট এলাকায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা। তীব্র নদীভাঙনে হত্যাযজ্ঞের স্থানটি বিলীন হয়ে গিয়েছিল। পরে সেখানে নতুন চর জাগে। ওই বধ্যভূমিতে সরকারিভাবে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবসে প্রদীপ প্রজ্বলন করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।

ঝালকাঠির অন্য বধ্যভূমিগুলোও অবহেলিত। জেলা শহরের পালবাড়ী গোডাউন ঘাট এলাকায় প্রায় ৭০০ লোককে গলা কেটে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘাটটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে কোনো স্মৃতিফলক নির্মিত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝালকাঠিতে আশ্রয় নিতে এসেছিলেন বহু মানুষ। এমন কয়েক হাজার মানুষকে সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের বিলাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যা করা হয়। কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মাঠের এক প্রান্তে মাটি দিয়ে একটি বেদি তৈরি করে রেখেছেন এলাকাবাসী। রাজাপুর উপজেলায় বাঘরী খালের ঘাট বধ্যভূমিতে পাকিস্তানি বাহিনী ৫ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। এই বধ্যভূমিতে উপজেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঠিপাড় গণকবর সংলগ্ন স্থানে এলজিইডির উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

শহিদ পরিবারের সন্তান শান্তিরঞ্জন বড়াল বলেন, ২০১০ সালের ৯ এপ্রিল কাঠিপাড়া গণকবরটি শনাক্ত হয়। জেলা পরিষদের অর্থায়নে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। পরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অর্থায়নে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের ২৫ মে কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া বাঁশবুনিয়া গ্রামে ৩৯ জনকে ধরে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। এই বধ্যভূমি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জেলা পরিষদের সামান্য বরাদ্দে জায়গাটি চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় একটি সংগঠন বাঁশের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করেছে। উপজেলার আওড়াবুনিয়া হাই স্কুল মাঠ বধ্যভূমিতে ২৫ জন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে। তবে সুনির্দিষ্ট করে স্থানটি চিহ্নিত করা যায়নি।

৯১৭১ সালে নলছিটির হিন্দু ব্যবসায়ীদের বৈঠকের কথা বলে থানায় ডেকে নেওয়া হয়েছিল। রাতে উপজেলার ষাটপাকিয়া ফেরিঘাটে ১৭ জনকে হাত বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০১৬ সালে নলছিটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ওই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close