প্রকাশ: শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৬:৩৩ এএম (ভিজিট : ২০৬)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পলায়নের খবরে সারা দেশ তখন আনন্দ মিছিলে উত্তাল। এর ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মসিংহ মহাসড়কের মাওনা এলাকায়ও। সেখানে আনন্দ মিছিলের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি রায়হানের পা ভেদ করে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আনন্দ মিছিল বিষাদে পরিণত হয়।
রফিকুল ইসলাম রায়হান (৩০) পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার জোলারগাতি গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। তিনি শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার কলাবাগান এলাকার ফজলুল হকের ভাড়াটে।
দুই ভাইয়ের মধ্যে রায়হান বড়। সংসারে সচ্ছলতা না থাকায় এসএসসির পর আর লেখাপড়া হয়নি। জীবিকার সন্ধানে মা-বাবাকে নিয়ে ২০১৭ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় এসে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন।
গুলিতে এক পা ঝাঁজরা হয়ে যাওয়ায় এখন ঘরবন্দি। মা-বাবা, স্ত্রী ও সন্তানসহ পুরো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রায়হান এখন কাজ করতে না পেরে অনেকটা অসহায় জীবনযাপন করছেন। আহত রায়হান বলেন, বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে আমরা আন্দোলন করেছি। যখন দেখেছি ঢাকায় আমাদের ভাইয়েরা মারা যাচ্ছেন, তখন আমরা শ্রীপুরের মাওনায় অনলাইন ও অফলাইনে সাধারণ জনগণকে এক করে আন্দোলন করেছি। শিল্প-কারখানা বন্ধ করে রাস্তাঘাটে অবরোধ পালন করেছি। শেখ হাসিনার পলায়নের খবরে হাজারো লোক নিয়ে বিশাল মিছিল বের করি আমরা। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে অচেতন হয়ে যাই।
আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা পাইনি, পরের দিন ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হই। দুদিন পর থেকে সরকার আমাদের খবর নেয়। এর আগে ধারদেনা করে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, শুধু পা নয়, জীবন গেলেও কোনো কষ্ট বা আক্ষেপ থাকত না। কেননা নতুন প্রজন্মের কাছে নতুন বাংলাদেশের পরিচয় করাতে পেরেছি। এখন দেশ সব ক্ষেত্রে বৈষম্যমুক্ত হলেই আমরা সার্থক। আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ ঠিক পথেই হাঁটবে। তবে ব্যক্তিস্বার্থ নয়, দেশের প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এক পা নিয়েও আন্দোলনে থাকার কথা জানান তিনি।
রায়হানের বাবা ফজলুল হক বলেন, সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল রায়হান। এখন সে কাজ করতে পারে না। বাধ্য হয়ে আমি বৃদ্ধ বয়সে ফুটপাথে কলা বিক্রি করে কোনোমতে খেয়ে-পরে আছি। তবে বাসা ভাড়া বাকি পড়েছে। ধারদেনা হয়ে গেছে অনেক। এরপরও আমাদের কষ্ট নেই। সবাই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকেও কিছু সহযোগিতা করেছে। তবে স্থায়ী একটি ব্যবস্থা হলে নিশ্চয়তা পেতাম।
সময়ের আলো/আরএস/