ই-পেপার সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

জন্মসনদ কার্যক্রমে স্থবিরতা, গ্রাহকের ভোগান্তি চরমে
প্রকাশ: শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৩১ এএম  (ভিজিট : ৩৬০)
ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য জন্মনিবন্ধন পেতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আঞ্চলিক অফিসে আসেন রাকিবুল হাসান। বছরের শেষে এসে রীতিমতো ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাকে। এই সনদ পেতে বেশ কিছু দিন ধরে ঘোরাঘুরিও করে আসছেন রাকিবুল। জন্মনিবন্ধন করতে আসা অভিভাবকদের প্রচণ্ড ভিড় থাকায় তিনি রুমের বাইরে অপেক্ষা করছেন।

তার সঙ্গে কথা হলে তিনি সময়ের আলোকে জানান, সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করাতে হলে পিতা-মাতারও জন্মসনদ থাকতে হয়। ফলে আমাদের নিজ জেলায় গিয়ে সব কিছু ঠিক করতে হয়েছে। এতে করে বড় ধরনের ঝামেলায় তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তি আরও সহজ হলে ভোগান্তি পোহাতে হতো না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শুধু তিনি নয়, রাজধানীর লালবাগ এলাকা থেকে স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আঞ্চলিক অফিসে আসেন শেখ মোহাম্মদ ফারুক। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি সময়ের আলোকে বলেন, অনলাইনে আমার স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন ইংরেজি ও বাংলা কপি না থাকায় সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করতে পারছি না। এই বিষয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে। মানুষের চাপ থাকার কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে।

এ ছাড়াও মেয়েকে বিদেশে পাঠাবে, তাই নিজের নাম সংশোধনের জন্য আসেন মফিজ হওলাদার। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, আমার মেয়ের পাসপোর্টে আমার নামের বানানে ভুল রয়েছে। ফলে তার বিদেশে যাওয়া ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তাই আমার জন্মনিবন্ধনের নাম পরিবর্তন করার জন্য এসেছি। কাজ করতে পারলেও প্রযুক্তির ঝামেলার কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। 

বছরের শেষের দিকে হওয়াতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাড়তি চাপ রয়েছে বলে জানায় সিটি সূত্র। এই সময়ে স্কুলে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হওয়ার ফলে জন্মনিবন্ধনের চাহিদা বেড়ে যায়। এ ছাড়াও চাকরিতে যোগদান, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নাগরিক সেবার ১৯টি ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদের প্রয়োজন হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ দলিল হাতে পেতে সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে ঘুরতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। প্রতিদিন হাজার হাজার অভিভাবক এসে ভিড় করায় লোকবলের অভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।

গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি অফিসে জন্মনিবন্ধনের কাজের জন্য মানুষের ভিড়। অনেকে নতুন জন্মনিবন্ধন করার জন্য এলেও অধিকাংশ লোকই আসেন সংশোধনের জন্য। তবে এর জন্য তাদের কিছু জটিলতায় পড়তে হয় বলে জানা গেছে। প্রতিটি টেবিলে ছিল কাজের ব্যস্ততা। ফলে অনেককে রুমের বাইরে অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে। তবে আগের চেয়ে ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে বলে সেবাগ্রহীতারা জানান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা আত্মগোপনে চলে যান। মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণের পর ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় দুই কমিটির ৫০ জন এবং ২০ জন আঞ্চলিক কর্মকর্তাসহ ৭০ জনকে। বর্তমানে ওয়ার্ডগুলোতে প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে সংশ্লিষ্ট সচিবরা দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে এ সনদ দেওয়া হচ্ছে। তবে, লোকবল সংকট এবং হঠাৎ করে চাপ বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নগরবাসী জানান, গত ৫ আগস্টের পর কিছু দিন জন্মনিবন্ধনের কাজ বন্ধ থাকায় আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তবে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। সেবার মান কিছুটা বাড়লেও সার্ভারের ঝামেলার কারণে মাঝেমধ্যে সমস্যায় পরতে হয়। এখনও আমাদের দেশে প্রযুক্তির উন্নয়ন করতে পারেনি। ফলে বারবার কাজ করাতে গিয়ে ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। এখন আগের মতো কোথাও টাকা দিতে হচ্ছে না। আর অল্প সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। প্রযুক্তি উন্নত হলে ঘরে বসে অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করা যাবে। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন শাখার তথ্য মতে, চলতি মাসে ৩ তারিখ পর্যন্ত জন্মনিবন্ধনের আবেদন সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৯৮টি। জন্মনিবন্ধন হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ২০২টি। জন্মনিবন্ধন সংশোধনের আবেদন ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার ৮৭৫টি। জন্মনিবন্ধন সংশোধন হয়েছে ৯ হাজার ৯৭০টি। মৃত্যু নিবন্ধনের আবেদনের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৯১৬টি। মৃত্যু নিবন্ধন হয়েছে ৯ হাজার ৪১১টি। মৃত্যু নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন ছিল ১০০টি। ট্রান্সজেকশন (ম্যানুয়াল পেমেন্ট) হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার ৭১২টি। সব নিবন্ধন কার্যালয় হতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এই বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আঞ্চল-৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার সময়ের আলোকে বলেন, নগরবাসী তাদের জন্মনিবন্ধন কাজে সবসময়ই আসেন। তবে এই সময়ে অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি চাপ থাকে। যখন স্কুলে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয় তখন বাড়তি চাপে থাকতে হয়। দক্ষিণ সিটি আগে নিজস্ব সার্ভারে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। তাই এখন কেন্দ্রীয় সার্ভারের মাধ্যমে সব ধরনের কাজ পরিচালনা হচ্ছে। আবেদনের এক থেকে দুই দিনের মধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করার চেষ্টা করি। স্কুলে ভর্তির সময় যত এগিয়ে আসছে জন্মনিবন্ধন করার জন্য ভিড়ও তত বাড়ছে। ফলে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে চাপ বেড়েছে।

জন্মসনদের কার্যক্রম চলমান আছে জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, জন্মনিবন্ধনকেন্দ্রিক আমাদের সেবা চলমান রয়েছে। তবে ডিসেম্বর মাসে যেহেতু বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি শুরু হয়, তাই এখন কাজের চাপ একটু বেশি। নগরবাসী যেন নাগরিক সেবা পেতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য নিবন্ধনের কেন্দ্রীয় সার্ভার দিয়েই সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আন্দোলনের সময় যেহেতু আমাদের ওয়ার্ডগুলো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই আঞ্চলিক কার্যালয় থেকেই সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডের অফিসগুলোকে সংস্কার করা পর আবারও সেখানে কার্যক্রম চালু করা হবে। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে জন্মনিবন্ধনের করে নিতে পারবেন। জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে মানুষের ভোগান্তি কমাতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান সময়ের আলোকে বলেন, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলররা অনুপস্থিত রয়েছে। ফলে জন্মনিবন্ধনের কার্যক্রমটা কিছুটা জটিল হয়ে গেছে। আপৎকালীন আঞ্চলিক অফিসে এই কার্যক্রম চালালেও একটি নিয়মে আসা দরকার। তাই সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে এই এটির সমাধান করা জরুরি। তা ছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধনের কাজ করাতে পারলে ভোগান্তি কমে আসবে। জন্মনিবন্ধনের কার্যক্রমকে বিভিন্ন হাসপালের সঙ্গে সংযোজন করতে পারলে আরও সহজ হয়ে যেত। এতে করে খুব সহজে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর সনদ তৈরি হয়ে যাবে। লোকবল কম থাকার কারণে কাজ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই লোকবল নিয়োগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুর্নীতির ঘটতে দেওয়া যাবে না। সাধারণ মানুুষের ভোগান্তির জন্য আমলাতন্ত্র দায়ী কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। জন্মনিবন্ধনের সেবা ঘরে বসে পাওয়ার মতো প্রযুক্তি চালু করতে হবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close