ধামরাই উপজেলায় একের পর এক অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটাই কৃষিজমি দখল করে গড়ে উঠছে। এসব ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ যা বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। ভাটার আগ্রাসনে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। কমছে ফসল উৎপাদন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না ইটভাটার মালিকরা। ইতিমধ্যে ধামরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ২১৬টি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে।
কৃষিজমিতে ভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কৌশলে ছাড়পত্র নিয়ে ভাটা স্থাপনের অনুমতি পেয়ে যাচ্ছেন ভাটা মালিকরা। অধিকাংশ ইটভাটার মালিকই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ ইটভাটা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইটভাটা মালিক সমিতি ভাটাপ্রতি ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ভাটা স্থাপনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ৫ লাখ টাকা দিলেই লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার মালিকরা পেয়ে যাচ্ছেন ভাটা চালানোর অনুমতি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইটভাটার মালিকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যততত্র গড়ে তুলছেন অবৈধ ইটভাটা।
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আহম্মেদুল হক তিতাস বলেন, ভাটার কালো ধোঁয়া শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, কাশিসহ ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ইটভাটার কারণে দিন দিন কমে আসছে কৃষিজমির পরিমাণ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ছয় বছরে ধামরাইয়ে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস পাবে।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। বিকল্প হিসেবে ইটভাটার মালিকদের ব্লক ইট তৈরির ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ ইটভাটার দৌরাত্ম্যে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে স্থানীয় কৃষিজমি, গাছপালা ও পরিবেশ। ইটভাটার অব্যাহত বায়ু দূষণের কারণে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকা। পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা স্থাপন করা হলেও এগুলো বন্ধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। ধামরাই উপজেলার তিন ফসলি কৃষিজমিতে একের পর এক ইটভাটা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। দীর্ঘদিন ধরে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এসব ভাটায়। ট্রাকে সেসব মাটি ও ইট পরিবহনের কারণে ভেঙে পড়েছে বহু রাস্তাঘাট। এ ছাড়া ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালুর কারণে আশপাশের বাড়িঘরে বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বহু কৃষিজমি। ভাটার ধোঁয়ার কারণে ফল ধরছে না অনেক গাছে। ইটভাটার কারণে আশপাশে থাকা গাছপালা ও ফসলি জমিতে কোনো ধরনের ফসল ও ফল হচ্ছে না। ভাটার পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পাশে ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে ছাত্রছাত্রীরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। ভাটার পাশের রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়ার কারণে মাটি পড়ে রাস্তায় ধুলা হয় যার প্রভাবে শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে এলাকায়।
পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ব্যক্তি ইটভাটা প্রস্তুত করতে পারবে না। তিন কিলোমিটারের মধ্যে বসতি এলাকা, ফলজ ও বনজ গাছ, বাগান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে মিলবে না ইটভাটার অনুমোদন।
ধামরাই ইটভাটার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ বলেন, উপজেলায় ২১৬টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে মাত্র ৭০টির। প্রতিটি ইটভাটায় জমি লেগেছে প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ বিঘা। ইটভাটার মালিকরা ক্ষমতাশীল হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা-হামলার হয়রানি হয়। প্রশাসনকে জানালে তারা ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে মিলে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কিছু না বলেই চলে যায়।
ইটভাটা সংলগ্ন বাসিন্দারা জানান, যেসব জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে ধান ও সবজি চাষ হতো। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালুর কারণে এখন সব জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে।
সময়ের আলো/আরএস/