প্রকাশ: বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:১১ এএম (ভিজিট : ৪২২)
সুমি আক্তারের প্রথম বিয়েবার্ষিকী ছিল গত ৪ আগস্ট। ঠিক এর তিন দিন আগে ৩১ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে নিহত হন গার্মেন্টস কর্মকর্তা সেলিম তালুকদার। ৮ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারের কাছে গিয়ে সুমি জানতে পারেন মা হতে চলেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত¦া। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অসহায় এই বিধবা নারী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত হন নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সেলিম তালুকদার (২৮)। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জুলাই রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ১ আগস্ট সকালে চিকিৎসকের দেওয়া মৃত্যু সনদ আর সেলিমের মরদেহ নিয়ে নলছিটিতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। ২ আগস্ট সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। বিয়ের বছর না ঘুরতেই স্বামীকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ ৫ মাসের অন্তঃস্তত্বা স্ত্রী সুমি আক্তার। স্বামী হত্যার ন্যায়বিচার চান তিনি। পাশাপাশি সরকারের কাছে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ারও দাবি তার, যাতে অনাগত সন্তানকে নিয়ে খেয়েপরে বাঁচতে পারেন।
তার কথায়, গত ১৮ জুলাই সকালে বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে নারায়ণগঞ্জে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। প্রথমে মুগদা হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে যান। তাকে মাথা, বুক ও পিঠে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। সুমি বলেন, তার অবস্থা খারাপ দেখে আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও আইসিইউ খালি পাইনি। পরে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করাই সেলিমকে। ৩১ জুলাই রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ১ আগস্ট সকালে চিকিৎসক তার মৃত্যুসনদ দেন।
সেলিম বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আড়াই বছর আগে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন। তারা তিন বোন ও এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজো।
সেলিমের স্ত্রী সুমি বলেন, তারা যেভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে সেটা মনে হচ্ছে পূর্বপরিকল্পিত। আমি এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার চাই। আমি এখন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমার সন্তানকে যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয় সেজন্য সরকারিভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ চাই আমি। আমার স্বামী শহিদ হয়েছেন। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তান থাকবে। আমার একটাই চাওয়া, আমার সন্তানকে কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয়। আমি যতদিন বাঁচব শহিদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবেই বাঁচব। সন্তানকে তার পরিচয়েই বড় করব।
সময়ের আলো/আরএস/