পাবনার চলনবিল অধ্যুষিত ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার বাউত উৎসব। সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার এই উৎসবে অংশ নেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা হাজারো মাছ শিকারি। ছোট বড় নবীন প্রবীণ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আসেন মাছ শিকারে।
উন্মুক্ত জলাশয়ে একসঙ্গে মাছ ধরার এ আয়োজনকে স্থানীয়রা বাউত উৎসব বলেন। তবে অবৈধ উপকরণ দিয়ে বিলে মাছ ধরায় দেশি মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। দেশি মাছ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে বিলপাড়ে যাত্রা করেন বাউতের দল। কারও হাতে পলো, কারও হাতে ধর্ম জাল, কিংবা মাছ ধরা অন্য উপকরণ নিয়ে মনের আনন্দে ছুটে আসেন সবাই।
শীতের ঠান্ডা পানিতে নামার আগে অনেকে গায়ে মেখে নেন সরিষার তেল। শতবছরের ঐতিহ্যের অংশ বাউত উৎস এখন অনেকটাই মলিন হয়ে আসছে। এর অন্যতম কারণ বিলে মাছ না পাওয়া। অবৈধ মাছ ধরা ও বংশ বিনষ্ট করা চায়না, কারেন্ট ও সুতি জালে মাছ ধরায় দেশি মাছের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অন্য দিকে সরকারিভাবে বিল ইজারা নিয়ে বাউতের আগেই বিলের পানিতে গ্যাস ট্যাবলেট ও পানি শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে ধ্বংস হচ্ছে মাছের বংশবিস্তার।
চলনবিল বেষ্টিত পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলসহ আশপাশের ছোট-বড় যেসব খাল বিল রয়েছে সব খানেই বাউতের দল এই সময়ে দলবদ্ধভাবে মাছ শিকার করেন।
প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার চলে এ মাছ শিকারের উৎসব। মাসব্যাপী চলা এ বাউত উৎসবে যোগ দেন পাবনাসহ আশপাশের জেলার শৌখিন হাজারো মানুষ।
ধরা পড়ে শোল, বোয়াল, রুই, কাতলা, গজার, চিতল, পুঁটি, কই, শিংসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ। তবে মাছ ধরা পড়ুক আর নেই পড়ুক একসঙ্গে আনন্দ উপভোগ করার লক্ষ্যেই সবাই আসেন এই বাউত উৎসবে।
স্থানীয়রা বলছেন, মৎস্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা অসাধু ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগসাজশে মাছ ধরছে একটি চক্র। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে বিলে জনসাধারণ মাছ ধরতে পারেন না। দখল আর বিল ভরাটের কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে খাল-বিলের পরিসর। কারেন্ট ও চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরায় আগের মতো মাছ মেলে না বিলে। ফলে দেশি মাছ রক্ষার্থে সরকারিভাবে এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের।
বাউত উৎসব নিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ বাউত উৎসব। পাবনা অঞ্চলসহ আশপাশের জেলার দেশি মাছের চাহিদার অনেকাংশেই পূরণ হয় এই জেলার মাছ দিয়ে। প্রতি বছর প্রচুর মাছ ধরা পরে পাবনার বিলগুলোয়। তবে হাজার হাজার মাছ শিকারি একসঙ্গে বিলে নামাটা মাছসহ জলজ প্রাণীর জন্য বেশ ক্ষতিকর। দেশি মাছের বংশ বিস্তারের জন্য উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রতি বছর মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। অবৈধ জাল দিয়ে যেভাবে মাছ শিকার করছে তাতে এই পেশায় সম্পৃক্তরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছেন। আমরা নিয়মিত অভিযান করছি, সাজা দিচ্ছি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। তবে আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে।
সময়ের আলো/আরএস/