ই-পেপার সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

গুজবে কান ভারী ভারতের
প্রকাশ: বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৩৮ এএম  (ভিজিট : ৪০৮)
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার ভারতে পলায়নের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে এক ধরনের টানাপড়েন চলে আসছে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে দেশটিতে। ভারতের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়েও ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো গুজব ছড়াচ্ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান বিরোধী দল, ইসলামপন্থি জঙ্গি ও পশ্চিমা শক্তির ষড়যন্ত্র। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ছাত্রলীগ যে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা ভারতের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের খবরে উপেক্ষিত। সেই সঙ্গে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা গুজব ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুজবে কান দিয়ে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অবমাননার মতো প্ররোচনামূলক কর্মকাণ্ড দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও বিভক্তি বাড়াচ্ছে। এতে সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ছে। গুজবে কান ভারী ভারত পায়ে পড়ে ঝগড়া করছে।

‘বাংলাদেশে হিন্দুদের মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে’ এমন দাবি জানিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজ নিজেদের এক্স অ্যাকাউন্টে প্রচার করে সংবাদমাধ্যম আরটি ইন্ডিয়া। আরটি ইন্ডিয়া সোমবার ভিডিওটি প্রচার করে। কয়েক হাজার ব্যবহারকারী এটি দেখেছেন। যে ভিডিও ফুটেজ বাংলাদেশের বলে দাবি করে প্রচার করা হয়েছে, তা আসলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের একটি কালীমন্দিরের। 

মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের দাবিটিও মিথ্যা। কেননা ওই ভিডিও ফুটেজ মন্দিরে হামলা কিংবা ভাঙচুরের নয়। বরং বর্ধমানের মন্দিরের ধর্মীয় আচার পালনের ভিডিও এটা। এটিকে বাংলাদেশের মন্দিরে ভাঙচুরের ভিডিও হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশে বন্ধ করা হলো সব ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল’ এমন একটি তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। একই তথ্য ভারতীয় গণমাধ্যম রিপাবলিক বাংলা তাদের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করা হয়নি। বরং কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই এই দাবি প্রচার করা হয়। সোমবার হঠাৎই আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের পোড়া পতাকার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এই ভাঙচুর ও হাইকমিশন অফিসের পতাকা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। একই দিনে ভারতের কোচবিহারে বিক্ষোভ হয়েছে এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে সনাতনী হিন্দু মঞ্চ নামের একটি সংগঠন। পেট্রাপোল বন্দরে বিভোক্ষ সমাবেশ করেছেন বিজেপির নেতাকর্মীরা।

এর আগে ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের পতাকা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিকৃতি পোড়ানো হয়। যে কোনো দেশের মিশন ও এর কর্মীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব স্বাগতিক দেশের। কিন্তু বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামের একটি সংগঠনের কর্মসূচির সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের সীমানার মধ্যে ঢুকে পড়ে।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ইদানীং কিছু ঘটনা নিয়ে অপতথ্য ছড়ানোর প্রয়াস আমরা দেখছি। অনেকাংশে দেখছি ভারতের গণমাধ্যম খুব আক্রমণাত্মকভাবে কাজগুলো করছে। এটার জন্য জাতীয়ভাবে ঐক্য তৈরি করে আমাদের বলতে হবে, তোমরা আসো, দেখো কী হচ্ছে। একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় ঐক্যও ধরে রাখা। আমাদের জাতীয় ঐক্য এখানে খুব জরুরি। কারণ আমাদের দেশ নিয়ে এক ধরনের অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এখানে আমাদের দেশের সুনামের একটা প্রশ্ন আছে। আমরা সবাই মিলে, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপতথ্যের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে আমাদের নামতে হবে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যম খুবই অখুশি বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যম প্রমাণ করতে চাচ্ছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে এবং তালেবান ঘরানার সরকার আসতে যাচ্ছে। এ ধরনের অপপ্রচার দুই দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভারত বন্ধুত্বসুলভ আচরণ খারাপ করছে। পায়ে পড়ে ঝগড়া করলে বাংলাদেশের মানুষ ইন্ডিয়া মুখী হবে না। তিনি আরও বলেন, ভারত যা করছে কোনো কারণ নেই এসব করার। আমাদের দেশে অন্য ধর্মাবলম্বী যারা আছেন তারা আমাদের নাগরিক। আমরা তাদের ভালো-মন্দ দেখছি। ভারতের গণমাধ্যম যা করছে, দয়া করে এসব করবেন না। আমরা দুই-দেশ বন্ধুত্ব নিয়ে থাকতে চাই।

ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে অনেক মিথ্যা খবর প্রচার করে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, এখানে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ইসকন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া গুজব ছড়াচ্ছে।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশবাসীকে উসকানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কিন্তু আমরা মূলত ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং আঞ্চলিক সার্বভৌমত্বের দেশ ছিলাম এবং থাকব, যেখানে জাতি, বর্ণ, ধর্মনির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত। আমি আমার সহকর্মী বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং কোনো উসকানিতে পা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ভারতের রাজনৈতিক মহল এবং তাদের সংবাদমাধ্যমগুলোয় উসকানিমূলক বক্তব্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত অপতথ্যে ছেয়ে আছে, যা ক্রমাগত বাংলাদেশবিরোধী মনোভাবকে উসকে দিচ্ছে। তারেক রহমান ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং জাতি, বর্ণ, ধর্মনির্বিশেষে সব নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকার কথা জানিয়ে সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন এবং কোনো উসকানিতে পা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close