বরিশালে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। সামনের দিনগুলোতে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও রোগী বাড়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ডসহ সবকটি ওয়ার্ড রোগীতে ঠাসা। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৪৮টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে প্রায় ৩০০ জন শিশু। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছেন ৬০ জন রোগী। একইভাবে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীদের ভিড় বাড়ছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। হাসপাতালের বহিঃবিভাগে শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন পাঁচজন শিশু চিকিৎসক।
এ বিষয়ে শিশু বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. সুবল কৃষ্ণ কুণ্ডু বলেন, এখন হাসপাতালে স্বাভাবিকের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। এ ধরনের রোগী সামনে আরও বাড়বে। তবে বর্তমানে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে রোগী কম আসছে। সেখানে অনেকেই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে ডাক্তার না দেখিয়ে ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো ঠিক না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া দরকার। এছাড়া মা তার সন্তানকে যে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে তা থেকে ঘাম হলেও শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই মায়েদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। যতটা সম্ভব ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা জরুরি। শিশুদের ঠান্ডা বাতাস ও ধুলাবালু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালে শয্যার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। সামনে রোগীর চাপ বাড়তে পারে। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের হাসপাতালে বেড সংখ্যা কম। প্রতিদিন গড়ে ৬০ জন রোগী ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে এ সময়ে সকল নাগরিককে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের প্রতি বেশি নজর দিতে হবে।
অনেকেই গ্রাম থেকে সন্তান নিয়ে এসে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ শিশুর জ্বর, ঠান্ডার জন্য স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাইয়েছেন। এতে শিশু সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। রোগীর স্বজনরা বলছেন, জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে তারা হাসপাতালে এসেছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শেবাচিম হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশু সানজিদাকে নিয়ে এসেছেন তার মা আলেয়া আক্তার। তিনি বলেন, বাচ্চার প্রথমে জ্বর ওঠে। পরে আবার সেরে যায়। এর মধ্যেই প্রচণ্ড কাশি হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কারো কারো সন্তানের নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু ভালো না হওয়ায় এখানে নিয়ে এসেছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া নিয়ে রোগী ভর্তি হচ্ছে। শীত আরও বাড়লে রোগীর সংখ্যা বাড়বে বলে আশংকা করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
সময়ের আলো/জেডআই