ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত সোয়া নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে মশাল মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।
এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম নাইম।
মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘দূতাবাসে হামলা কেন, মোদি তুই জবাব দে’, ‘তুমি কে আমি কে, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘মোদির দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘মমতার দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে ছাত্রশিবির জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান বলেন, আজকে আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে এখানে এসে সমবেত হয়েছি যখন আগরতলায় বাংলাদেশি দূতাবাসে উগ্র ভারতীয়রা হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশের পতাকাকে তারা পদদলিত করেছে, সেই সাথে ভারতীয় মিডিয়া ক্রমাগত অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা ভারতকে বলে দিতে চাই, আমরা আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে আপোষহীন, অস্তিত্বের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। কোন প্রকার ঔপনিবেশিক শাসক আমাদের বেশিদিন শাসন করতে পারেনি, যত ধরনের আগ্রাসী শক্তি এখানে এসেছে তাদেরকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া হয়েছে, তোমাদের ও দাঁত ভাঙ্গা জবাব আমরা দেব। ভারত এই পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে আসছিল। বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করে, গুম করে, ষড়যন্ত্র করে, বিনা ভোটের নির্বাচন দিয়ে এই দেশে তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এই দেশের ছাত্রজনতা তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। ভারতকে আমরা সাবধান করে দিয়ে বলতে চাই এই বাংলাদেশ, এই বঙ্গভূমিতে সবসময় সকল ধর্মের মানুষ ধর্মীয় সহাবস্থানের ভিত্তিতে বসবাস করে আসছে। তোমরা সাম্প্রদায়িক কথা বলে আমাদের এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট করতে পারো না। আমরা ভারতকে বলতে চাই, তোমরা সীমান্ত হত্যা বন্ধ করো, পানির হিস্যা বুঝিয়ে দাও, এই যে দূতাবাসে হামলা করেছো তার জন্য ক্ষমা চাও। এবং এটা মনে রাখবে আমাদের শরীরে এক ফোটা রক্ত থাকা স্বত্বেও আমরা আমাদের দেশের এক ইঞ্চি মাটিকেও আধিপাত্যবাদী শাসনের দিকে ঠেলে দিতে পারব না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তোমাদের রুখে দেব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হলে সবার আগে স্মরণ করতে হবে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান। এই গণঅভ্যুত্থান শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে বিদায় করার অভ্যুত্থান ছিল না। আমরা অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলাম, শেখ হাসিনা ভারতের পুতুল ছাড়া আর কিছুই না। এই গণঅভ্যুত্থান ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে করা এক অভ্যুত্থান। শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে বিদায় করার মাধ্যমে যারা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে পরিপূর্ণ করতে চায় এবং ২৪-কে একাত্তরের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায় তারা ভারতীয় দালাল। কিন্তু এই বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিতেও যতদিন পর্যন্ত ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিস্তার থাকবে ততদিন এই ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান পরিপূর্ণ হবে না। শক্তিশালী স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে নিরস্ত্র যুদ্ধ করে সরাতে মাত্র ৩৬ দিন লেগেছে। অস্ত্র হাতে তুলে নিলে এই বাংলার মাটিতে কোনো আধিপত্যবাদী এই বাংলার মাটিতে স্থান পাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, যেসব ভারতীয় দালালরা এখনো দেশের মিডিয়া ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে রয়েছে তাদেরকে বরখাস্ত করতে হবে।’
এসময় গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘যখনই আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং হিন্দুত্ববাদের কথা মনে করি তখনই আমাদের মনের পড়ে আমার ভাই আইনজীবী সাইফুল এবং আবরারের কথা। আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রী বলেছিলেন বাংলাদেশ আর ভারতের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। আমরা বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ আর ভারতের সম্পর্ক শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক সমতার নীতির বাইরে কিছুনা। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা দল, মত, ধর্মীয় মতাদর্শ, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভুলে গিয়ে এক হতে একমুহূর্ত দেরি করব না। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। বাংলাদেশের কোনো একটি অঞ্চলে যদি অন্যায়ভাবে হামলা করা হয় তাহলে বাংলার জনগণ সেটা সহ্য করবেনা।’
সময়ের আলো/আরআই