জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তিন মাস আগেও কল্পনা করতে পারেনি খোলা ময়দানে মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া চাইতে পারবো। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সারা বাংলাদেশকে একটি কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, তারা চেয়েছিলো তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। এমন একটা ভাব তারা দেশের মালিক আর আমরা সবাই ভাড়াটে। কিন্তু আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে কোনো গুম, খুন, ছিনতাই হবে না। সবাই সম্মানের সাথে নিজ মর্যাদা নিয়ে চলবে। আমরা এমন যুব সমাজ চায় যেখানে মাদকের ছোঁয়া থাকবে না।
রোববার (১ ডিসেম্বর) রাতে বরিশাল সফর উপলক্ষ্যে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অনুষ্ঠিত পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের ৩ জন শীর্ষ স্থানীয় নেতা একাধারে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিল। আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি তাদের হাত ছিল দুর্নীতি মুক্ত। সেই দলের মানুষগুলোই আজ জামায়াতে ইসলামী করেন।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বহু মানুষকে গুম ও খুন করা হয়েছে। বহু মানুষকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিলো শুধু মাত্র সত্যের পক্ষে থাকার জন্য। প্রবীণ ও বিজ্ঞ আলেমদেরও তারা জেলে দিতে দ্বিধা বোধ করেনি। তাদের পায়েও ডান্ডা বেডি পরিয়েছে। কোমরে দড়ি পরিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ আরশ কেঁপে উঠেছিল এই নির্দোষ আলেমদের জন্য। কুরআনের পাখি আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাইদিকে তারা তিলে তিলে খুন করেছে। আমাদের সিপাহি সালার বহু নেতাকে তিলে তিলে খুন করা হয়েছে।
‘অনেক সাংবাদিক আমাকে বলেন, আপনাদের কারা ২৪-এর এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছে। আমি বলি, যারা শহীদ হয়েছে তারা কোনো দলের হতে পারে না তারা সবাই আমাদের সম্পদ। তারা বুক চিতিয়ে রাস্তাই নেমে বলছিল বুকের ভিতর অনেক ঝড় বুক পেতেছি গুলি কর। এই শহীদরা সবাই আমাদের সম্পদ। আবু সাইদ কি করেছিল, সে কি হাতে গুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। না সে শুধু বলেছিলো আমার অধিকার দাও। কিন্তু এই জালিমরা ৩টা গুলি করে তাকে শহীদ করেছে।’
শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এই সকল শহীদ পরিবারের কাছে ঋণী। আমরা প্রত্যেকটা পরিবারকে আশ্বস্ত করতে চাই আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আপনাদের পাশে আছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করে তাদের অধিকার আদায় করবো। একজন বিচারপতি কলার পাতায় শুয়ে দেশ ছাড়তে চায়। তার এই অবস্থা আমাকে লজ্জিত করে। তবে তারা বিচার ব্যবস্থা যেভাবে ধ্বংস করেছে তা আমাকে আরও বেশি লজ্জিত করে।
“আল্লাহ রাসূল বলেছেন, যে রাষ্ট্রে মুসলিম থাকবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে সংখ্যালঘুরা তাদের কাছে আমানত। কেউ যদি এই আমানত রক্ষা না করে তবে আমি কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবো। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে মালিক নয়, সেবক হয়ে থাকবে জানিয়ে বলেন, ‘আমার যে সম্পদ আছে তা বাড়বে না। প্রয়োজনে জনগণের খেদমতে সেই সম্পদ বিলিয়ে দেব।’ মসজিদ পাহারা দেয়া লাগে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাহলে কেন মন্দির পাহারা দেয়া লাগবে। কিছু হুতোম পেঁচা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এদেশের জনগণ সেই ফাঁদে পা দেয়নি। জীবন যাবে কিন্তু দেশের এক ইঞ্চি মাটিও কারও হাতে তুলে দেব না।”
মহানগর আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের সভাপতিত্বে ও মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় প্রোগ্রামে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, বরিশাল জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল জব্বার, ভোলা জেলা আমির জাকির হোসাইন, পটুয়াখালী জেলা আমির অ্যাডভোকেট নামজুল আহসান, ঝালকাঠি জেলা আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান।
আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর নায়েব আমির হোসাইন ইবনে আহমেদ অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাস্টার মিজানুর রহমান, হাফেজ হাসান আতিক, তারিকুল ইসলাম কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খসরু, মাওলানা জয়নুল আবেদিন, মাওলানা শহিদুল ইসলাম, মাওলানা শফিউল্লাহ তালুকদার, অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আমিন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, শামীম কবির, মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
সময়ের আলো/আরআই