নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই লক্ষ্মীপুরে অবাধে চলাচল করছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। আর এসব যানবাহনে ব্যবহৃত হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার। এতে করে অনেক সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এদিকে বেশিরভাগ পরিবহন চালকরাই জানেন না, গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম কানুন। তারা এসব বিষয়ে দুষছেন বিআরটিএকে। অপরদিকে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, সব কিছু যাচাই-বাচাই করেই সড়কে পরিবহন চলার অনুমোদন দেওয়া হয়। আর পুলিশ বলছে, ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে সিএনজিচালিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এদের বেশিরভাগই নেই ফিটনেস সার্টিফিকেট। আবার এসব যানবাহনে ব্যবহৃত হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার। অথচ ৫ বছর পরপর এসব গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করানোর নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না কেউই। বিআরটিএর তথ্য মতে, লক্ষ্মীপুরে রেজিস্টেশনকৃত শুধু সিএনজিচালিত অটোরিকশাই রয়েছে ৮ হাজার। এর মধ্যে ৭ হাজারেরও বেশির নেই ফিটনেস।
স্থানীয়রা বলছেন, ফিটনেসবিহীন এসব যানবাহনে ব্যবহৃত মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার যেন, এক একটি ‘চলন্ত বোমা’। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বিস্ফোরণ, তা জেনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে ওই সব যানবাহনে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। এতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারির অভাবকেই দুষলেন তারা।
এদিকে গত ১৪ অক্টোবর জেলা শহরের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রিন লিফ ফিলিং স্টেশনে লক্ষ্মীপুর থেকে রামগতি সড়কে চলাচলকারী একটি বাসে গ্যাস ফিলিং করা সময় সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১৫ জন। এদিকে খোদ চালকরাই বলছেন, বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও গ্যাস ফিলিং স্টেশনে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই তারা যানবাহন চালাচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর গ্রিন লিফ গ্যাস ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক আল আমিন হোসেন বলেন, সবসময় গাড়ির চাপ বেশি থাকায় গ্যাস ফিলিং করার সময় সব যানবাহনের সিলিন্ডারের কাগজপত্র পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। এজন্য পুলিশ প্রশাসন ও বিআরটিএর নজরদারি বাড়ানোর দাবি তাদের। তবে তিনি এও বলছেন, গেল ১৪ অক্টোবর ফিলিং স্টেশনে রিফিল করা সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে অধিকতর সতর্ক অবস্থায় থেকে এখন যানবাহনে গ্যাস রিফিল করছেন তারা।
জেলা শহরের বাসিন্দা ও লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, পুলিশ প্রশাসন যদি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করে, তা হলে আমাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
জেলা শহরের বাঞ্চানগর কাউছার এলাকার বাসিন্দা বলেন, ঝুঁকি আছে জেনেও ওই সব ফিটনেসবিহীন যানবাহনে প্রয়োজনের তাগিদে চলাচল করতে হয় আমাদের। চলাচলের সময় সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকি, এই বুঝি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অদৃশ্য কারণে এই সব যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না ট্রাফিক পুলিশ।
এদিকে পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, সারা বছর নজরদারি না থাকলেও ফিটনেস পরীক্ষার সময় তৎপর হয়ে ওঠেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। তবে তাদের ম্যানেজ করেই বৈধতা নিয়ে থাকেন যানবাহনের।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মোরশেদ বলেন, ফিটনেস এগুলো তো আমরা বুঝি না। পুলিশে ধরলেই টাকা নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেয়। টাকা দিলেই সব মামলা মাপ এমনটাই বলছেন এই চালক। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গ্যাস ফিলিং স্টেশনে ২০-৩০ টাকা দিলেই সিলিন্ডারের মেয়াদ না দেখেই দেওয়া হচ্ছে গ্যাস।
সিএনজিচালক মামুন বলেন, গাড়ির ফিটনেস থাকলেও পুলিশকে টাকা দেওয়া লাগে, না থাকলেও টাকা দেওয়া লাগে। এভাবেই আমরা সড়কে গাড়ি চালাই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা গাড়ির কাগজপত্র কীভাবে করব। বিআরটিএতো আমাদের কোনো ছাড় দেয় না। সেখানে গেলেও টাকা ছাড়া কোনো সেবা মেলে না।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখেই ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয়। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও বিআরটিএর যৌথ সমন্বয়ে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি।
এদিকে লক্ষ্মীপুর ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) প্রশান্ত কুমার দাশ বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত চেক পোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের নজরে যা আসে, আমরা মামলা দিচ্ছি। সড়কের চলাচলকারী ফিটনেসবিহীন যে কোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তৎপর রয়েছে পুলিশ।
সময়ের আলো/আরএস/