ই-পেপার শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ও উদ্বেগ
প্রকাশ: সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১:১৬ এএম  (ভিজিট : ৩১৮)
জাতির জীবনে কখনো কখনো কিছু ঘটনার সূত্রপাত উদ্বেগের সঞ্চার করে। এসব ঘটনার অভাবিত ও অপ্রত্যাশিত। আমরা এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি সম্মুখে। কী হবে তাও অজানা। কেন এই দুর্ভাবনা? একটু খতিয়ে দেখা যেতে পারে। গত কয়েক দিনের পর্যালোচনা করে বলা যায় যে ঘটনাবর্তে আমরা আবর্তিত হচ্ছি তা মোটেও স্বাভাবিক নয়। প্রথম ঘটনা : সংঘাতে পুরান ঢাকা ও যাত্রাবাড়ীতে এক ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

পরের দিন ডেমরায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সংঘর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল লন্ডভন্ড হয়। এরপর তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলের ছাত্রদের সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। আর ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সমাবেশ ঘিরে থমকে যায় স্বাভাবিক চলাচল।  ২৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে ঘটনার এ সময়ের এক ভয়াবহ চিত্র। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেফতার প্রতিবাদের জেরে নিহত হন সহকারী সরকারি কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম। ২৭ নভেম্বর সমগ্র চট্টগ্রামজুড়ে নেমে আসে এক ভীতিকর পরিস্থিতি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে নামে। হামলা-পাল্টা হামলা চলে। জনমনে এখন পর্যন্ত স্বস্তি আসেনি। আরও কিছু ঘটনা অবশ্যই উদ্বিগ্ন করে। এর মধ্যে রয়েছে আনসার সদস্যদের সচিবালয় ঘেরাও, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা জন্য নানা তৎপরতাÑএগুলো অস্বাভাবিক ঘটনা অন্তর্ভুক্ত।

একদিকে ছাত্রদের অসহিষ্ণুতা, অন্যদিকে পেশাজীবীদের বহুমুখী কর্মকাণ্ড হতাশার উৎস। সরকারের ইমেজ নষ্ট করা, স্বাভাবিক গতিকে বদলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে যা বিবেচনা করা যায় অবশ্যই। অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ সবাইকে আশাবাদী করলেও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা জনমনে হতাশা 
তৈরি করেছে।

স্বতঃস্ফূর্ত এক গণঅভ্যুথানে অংশ নিয়েছিল সাধারণ জনতা। অসংখ্য ছাত্রদের আত্মাহুতি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে যে স্বপ্নের জন্ম তা বাস্তবায়িত হবে না এ আমরা কেউ চাইব না। পরাজিত সরকারের আজ্ঞাবাহীদের নানা ষড়যন্ত্র, দেশি-বিদেশি এজেন্ট ও বিভিন্ন সংস্থার অপতৎপরতা আজ রুখতে হবে। তা না হলে আমাদের অর্জন বিসর্জনে যাবে। গণতন্ত্র যাত্রা ব্যাহত হবে। এই দেশ পাকিস্তান কিংবা বার্মার মতো বারবার হোঁচট খাবে। বাঙালির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও স্বপ্নযাত্রা কখনো বাধাগ্রস্ত হয়নি। অসফল হয়নি। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর যেসব ষড়যন্ত্র, নিগ্রহ, অত্যাচার অপপরিকল্পনা হয়েছিল বাঙালি রুখে দিয়েছে। 

বাঙালির বিজয় ইতিহাসের এক সূর্য পলক।গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সাধারণ জনতা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মীরা কিছুটা হতাশ। আওয়ামী লীগ বিরোধী দুটি রাজনৈতিক দলের ধারণা পতিত সরকার এসব অস্থিরতার জন্য দায়ী। তারা বর্তমান সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে বিবৃতি দিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। এটি অস্বীকার করা যাবে না। এক অস্থিরতার ইন্ধন যোগাচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সমর্থক, দেশি-বিদেশি এজেন্ট। সাড়ে তিন মাসের অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত ধীরগতিতে সামনে এগোচ্ছে। বহু বিক্ষোভ দমনে তারা নমনীয় রয়েছে। জনমনে বিশেষ ইমেজ তৈরি করতে তারা বদ্ধপরিকর। অন্তর্বর্তী সরকারের সব ক্ষেত্রেই শান্ত, স্বাভাবিক অবস্থান স্পষ্ট করেছে। কোনো পেশার তৈরি করা কিংবা বল প্রয়োগ না করা তাদের এক স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু এ নয় তারা ভুল সিদ্ধান্ত নেবে। রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে পড়ুক তারা চাইবেন বলে আমরা মনে করি না। যেসব উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞরা দেশ পরিচালনায় যুক্ত রয়েছে তারা অভিজ্ঞ ও দক্ষ। অনেকে ভাবচ্ছে সরকারের নীরব থাকা এক ধরনের দুর্বলতা। 

এটি ভুল ধারণা। চট্টগ্রামের ঘটনা কিছুটা বর্তমান সরকারকে অস্বস্তিতে ফেললেও সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেফতার ও পরবর্তী ঘটনা এক উল্টো স্রোতে যুক্ত হওয়া অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন। আমি নিশ্চিত সরকার ঘটনার অন্তরালে গিয়ে বিষয়টি উপলব্ধি করছে যে হাসিনা যে ভুল করেছিল তার মধ্যে ছিল অল্প কিছু মানুষকে কাছে রেখে শুভাকাক্সক্ষীদের দূরে রাখা। 
তিনি নিজেকে সবচেয়ে ক্ষমতাবান ভেবেছিলেন। তার পিতার নাম ও তার কীর্তি তাকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত করেছে তা স্পষ্ট। হাসিনা গংদের কাছে গোয়েন্দা বিভাগ কিংবা দেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো প্রকৃত চেহারা ধরা পড়েনি। 

বড় ভুলের কারণে তার পিতা শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছে। এটি কি কারও প্রত্যাশিত ছিল? না তা নয়। আমরা দম্ভোক্তি ও ক্ষমতার মোহ ও বল প্রয়োগ কি জঘন্য অধ্যায় তৈরি করে তা প্রত্যক্ষ করেছি। কি নিষ্ঠুর পরিণতি তার? ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। শেখ হাসিনা শুধু তার পিতাকে কলঙ্কিত করেনি বরং তার পরিচিতি আজ ফ্যাসিস্ট হিসেবে।

আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারত, সবার মধ্যে হতাশা, ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নেতৃবৃন্দ শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সহযোগিতা প্রার্থনা করছেন। এটিই স্বাভাবিক।

যত ষড়যন্ত্র, অব্যবস্থাপনা তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হোক না কেন নোবেল বিজয়ী অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার যোগ্য ও সহকর্মীরা সবকিছু সামলে নিতে পারবেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। বাঙালি অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী। এখানে কোনো সাম্প্রদায়িক তৎপরতা চলবে না। আমরা যেমন দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে পাকিস্তান শাসককে বিদায় করেছিলাম সেই ধরনের এক পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। এখনও আমরা সফল হব। 

যতই ষড়যন্ত্র, অপতৎপরতা হোক না কেন বাঙালির জাগৃতি, উপলব্ধি ও ঐক্যবদ্ধতা গণতন্ত্রের প্রকৃত সূচনা করবেই। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচন দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। স্বল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করা কঠিন একটি কাজ। বিশেষ করে সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দুরুহ। সংবিধানের ৭০ ধারার দিকে দৃষ্টি দিলে দেখব সরকারি কিংবা বিরোধী দলের সদস্যদের দলীয়প্রধানের বিরুদ্ধে মতামত দেওয়ার পথ রুদ্ধ। দলীয়প্রধানের একচ্ছত্র ক্ষমতা যা স্বেচ্ছাচারিতার দলীয়প্রধানের বিপক্ষে ভোট দিলে তার সদস্যপদ বাতিল বলে গণ্য হবে। সংবিধানের ২ (ক) ধারাতে প্রধানমন্ত্রীকে সর্বশক্তিমান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকাল জাতিকে ইতিহাসের ক্রান্তিকালকে চিহ্নিত করে। লুটপাট, বিপুল অর্থ আত্মসাৎ, সরকারদলীয় আনুগত্যের কারণে প্রশাসন, আমলাতন্ত্রের রাজনীতিবিদদের একচ্ছত্র স্বেচ্ছাচারিতা প্রত্যক্ষ করা যায়। রাতের আঁধারে সরকারদলীয় ও প্রশাসকের ভোট দেওয়ার চিত্র সবার জানা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দেশে একটি জাগরণের ডাক দিয়েছে। এই ডাকে শামিল না হতে পারলে আমরা পিছিয়ে যাব। নির্বাচিত সরকারকে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে সংশোধনী অনুসমর্থন (রেটিফিকেশন) করে অন্তর্বর্তী সরকারের সব কাজকে সমর্থন বৈধতা দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

প্রাবন্ধিক ও গবেষক
কর্মকর্তা, জাতীয় জাদুঘর




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close