প্রকাশ: রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:২০ এএম (ভিজিট : ২০৮)
৫০ শয্যার রাজাপুর উপজেলা সরকারি হাসপাতালে কাটাছেঁড়ার সেলাইয়ের জন্য রোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজাপুর হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট বিবেক সিকদার যখন ডিউটিতে থাকেন তখন হাসপাতালে আসা কাটাছেঁড়ার সব রোগীর কাছ থেকে জোরপূর্বক সেলাই দেওয়ার জন্য টাকা নেন। এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে সেলাই দেওয়ার তিন দিন পর পুনরায় হাসপাতালে ব্যান্ডেজ খুলে সেলাইয়ের স্থান পরিষ্কার করার জন্য হাসপাতালে এলে তখনও রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট বিবেক সিকদারের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে ডা. রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে তিনি জানান, খুশি হয়ে অনেকেই টাকা দেয়।
এ বিষয়ে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল বলেন, বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে বলে আমাকে হাসপাতালের অন্য এক চিকিৎসক জানিয়েছেন। যদিও আমি নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ না।
ডা. আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল আরও বলেন, এখনও আমি কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। ঘটনা জানার পর একজন আরএমওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে বিষয়টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদে বিবেক শিকদার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি স্থানীয় এক সংবাদকর্মী মো. নাঈমের মায়ের পা কেটে যাওয়ায় তাকে নিয়ে রাজাপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কক্ষে গেলে কর্তব্যরত অ্যাসিস্ট্যান্ট বিবেক সিকদার নিজেই কাটা পায়ে সেলাই দিয়ে ব্যান্ডেজ করে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। এরপর সেলাই দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মিনারা বেগম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সন্ধ্যার পর নাঈম ভাই তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। এ সময় সেখানে ডিউটিতে থাকা একজন (অ্যাসিস্ট্যান্ট বিবেক সিকদার) সেলাই দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার পর টাকা চায়। যদি আমার কাছে টাকা চাইত তা হলে আমি তাকে জুতাপেটা করতাম। নাঈম ভাই তো কিছুই করলেন না! সরকারি হাসপাতালে সবকিছু ফ্রি। সেখানে আবার টাকা দিতে হবে কেন? তাদের কাজের জন্য সরকার বেতন দিচ্ছে। তারপরও কেন সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে এলে টাকা দিতে হবে! একজন সচেতন মানুষকেও যদি সরকারি হাসপাতালে টাকা দিতে হয় তা হলে আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমরা যে কতটা হয়রানির শিকার হই তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সংবাদকর্মী মো. নাঈম বলেন, আম্মুর পা কেটে যাওয়ায় তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত এসিস্ট্যান্ট পায়ে সেলাই দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে টাকা দাবি করেন। তখন তাকে জিজ্ঞেস করি, সরকারি হাসপাতালে কাটাছেঁড়ার সেলাই দেওয়ার জন্য টাকা দিতে হয়? এমন প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, এটাই নিয়ম। সবাই টাকা দেয়। মো. নাঈম আরও বলেন, আমার আম্মুর আগে যে রোগী ছিল তার কাছ থেকেও এই বিবেক সিকদার টাকা নিয়েছে। তিনি ডিউটিতে থাকা অবস্থায় এ রকম সব রোগীর কাছ থেকে টাকা নেন। ইমারজেন্সি রুমের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলে তার টাকা নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যাবে।
সময়ের আলো/আরএস/