প্রকাশ: রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১:০১ এএম (ভিজিট : ৩১৮)
সন্তান বাবা-মার কাছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি আমানত। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এ আমানতের হেফাজত করা জরুরি। সন্তানের চরিত্র ও জীবন গঠনের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব বাবা-মার। সময়মতো তাকে শাসন করা, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা, সৎ ও দ্বীনি পরিবেশে রাখা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। কখনো কোনো অপরাধ হয়ে গেলে তাকে তার জন্য অল্প হলেও শাস্তি দেওয়া কর্তব্য। তবে অবশ্যই তা শুধুই ভয় দেখানো ও তাকে শোধরানোর জন্য হতে হবে। ছোটখাটো অন্যায়গুলোর জন্য শাস্তি দিলে আর বড় অন্যায় করতে সাহস পাবে না। তবে অনেকেই বাচ্চাদের বদঅভ্যাসের কারণে রাগ বা শাসন করতে নারাজ।
তাদের কথা হলো, এখন কিছুই বলার দরকার নেই, বড় হলে সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। এটা মারাত্মক ভুল। ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও বুজুর্গ মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেছেন, ‘বাচ্চাদের স্বভাব-চরিত্র যা গড়ার পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে গঠন হয়ে যায়। এরপর ভালো-মন্দ যেটাই হলো তা মজবুত ও পাকাপোক্ত হতে থাকে, যা পরবর্তীতে সংশোধন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সুতরাং বাচ্চা বুঝুক আর না বুঝুক ছোটবেলা থেকেই বোঝাতে থাকবেন। একসময় সে বুঝবে এবং উত্তম চরিত্র নিয়ে বড় হবে’ (ইসলাহে খাওয়াতিন : ২৫১-২৫২; তুহফাতুল উলামা : ১/৪৮৩)। তার এ বক্তব্য যেন রাসুলের এ হাদিসেরই প্রতিনিধিত্ব করছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন-‘সন্তানের বয়স সাত বছর হলে তাদের নামাজের আদেশ দাও, দশ বছর বয়সে নামাজের জন্য শাসন করো এবং এ বয়সে তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৭৫৬; আবু দাউদ : ৪৯৪)
আমরা অনেকে মনে করে থাকি, শিশু যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে তখন থেকেই তার শিক্ষার বয়স শুরু। তবে বাস্তবতা হলো, প্রতিটি শিশু জন্মের পর থেকেই ধীরে ধীরে শিখতে থাকে। তাই কোনো শিশুর সামনে যেকোনো কথা ও কাজ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। আপনি যদি আপনার শিশুর সামনে কাউকে গালি দিয়ে কথা বলেন, কারও সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেন তা হলে সে সেটাও শিখবে। এ জন্য আপনার সন্তানকে আপনি কী রূপে দেখতে চান, সে অনুযায়ী আগে নিজেদের ও আশপাশকে গড়ে তোলা জরুরি। বিশেষভাবে শিশুটি যে জায়গায় বসবাস করবে সেখানে আপনার পছন্দমতো পরিবেশ গড়ে তুলুন। কচি বয়স থেকেই শিশুকে সিনেমা, নাটক, অশ্লীল মুভি দেখা, নাচ-গানসহ শরিয়তবিরোধী সব কাজ থেকে বিরত রাখা আবশ্যক। এমনিভাবে কারও সঙ্গে যেন খারাপ ব্যবহার না করে, মিথ্যা না বলে, গালি না দেয়, গিবত না করে এসব বিষয়ও খেয়াল রাখতে হবে।
পিতা-মাতার কর্তব্য হচ্ছে ব্যস্ততার ভিড়েও সন্তানদের জন্য কিছু সময় বের করা। তাদের মানসিক পরিচর্যার দিকে নজর রাখা। একই সঙ্গে তাদের ভালোবাসায় আগলে রাখা। একজন আদর্শ পিতা-মাতা হওয়ার জন্য জরুরি হলো সন্তানদের প্রতি দয়া, স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা থাকা। তখন সন্তানরাও সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠতে পারবে এবং তাদের অন্তরে সাহস ও মনোবল সৃষ্টি হবে। তাদের অন্তর পরিচ্ছন্ন হবে এবং বুদ্ধি-বিবেক স্বচ্ছ ও তীক্ষè হবে। পরবর্তীতে তাদের থেকে কোনো অন্যায় হয়ে গেলে সংশোধন করা সহজ হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেকের সন্তানকে আদর্শ সন্তান হিসেবে কবুল করুন।
সময়ের আলো/আরএস/