তুরাগ পারে ছোট্ট একটি গ্রাম, নাম বিরুলিয়া। ঢাকা শহরের কাছেই এমন একটি জায়গায় একবার ঘুরে আসতে পারেন। শুধু গ্রামের সবুজ সুন্দর প্রকৃতিই নয়, এখানে গেলে দেখতে পাবেন পুরোনো ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি, দেখতে পাবেন গোলাপের বিস্তৃত বাগান।
জমিদার রজনীকান্তের বাড়িসহ ১১টি প্রাচীন স্থাপনার জন্য বিরুলিয়া বিখ্যাত। ইতিহাসের সাক্ষী কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গেলেও বিরুলিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও জমিদার বাড়ি লোকচক্ষুর অন্তরালেই রয়ে গেছে। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে ছড়ানো-ছিটানো কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। গ্রামের শেষ ঠিক মাথায় নদীর তীর ঘেঁষে বাড়িটি জমিদার রজনীকান্ত ঘোষের। সেখানে এখন বাস করছেন রজনীকান্ত ঘোষের বংশধররা। বাড়িগুলোতে আছে সদরঘর, বিশ্রামঘর, বিচারঘর, পেয়াদাঘর, ঘোড়াশালসহ উল্লেখযোগ্য আরও কিছু ঘর। তবে এসব এখন অন্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরুলিয়ার মিরচিনি মুরালির খুব কদর। তাই তো সারা দেশের বিভিন্ন মেলায় সোনারগাঁয়ের পাশাপাশি বিরুলিয়ার এসব পণ্য বিক্রি হতে দেখা যায়। আর বিরুলিয়া বিখ্যাত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জন্য। বিরুলিয়া গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে নদের পারে অবস্থিত জমিদার রজনীকান্তের সুদৃশ্য বাড়িটি।
বিরুলিয়ায় আরও দেখতে পাবেন ৮৫ বছর পুরোনো শ্রী শ্রী বৃন্দাবন চন্দ্র জিউ বিগ্রহ মন্দির। আরও ছোট ছোট অনেক মসজিদ, মন্দির আছে। আছে শতবর্ষী এক বটবৃক্ষ যার ছায়ায় প্রতি পহেলা বৈশাখে বসে মেলা। পুরোনো মাটির ঘরগুলোও ভালো লাগবে। আমাদের ঢাকার মাঝেই আছে এমন মেঠোপথ আর মাটির ঘর, বিষয়টা ভাবাই যায় না।
গ্রামের প্রধান রাস্তাটি সরু এবং ইট দিয়ে বাঁধানো। এটি তারক চন্দ্র সাহা সড়ক নামে পরিচিত। আর মনোমুগ্ধকর গোলাপ বাগান তো আছেই। মিরান্ডা জাতের গোলাপ বেশি চাষ হয় বলে বিরুলিয়া ইউনিয়নের গ্রামগুলো লাল গোলাপের গ্রাম বলে পরিচিতি পেয়েছে। তবে গোলাপ ছাড়াও এখানে গ্লাডিওলাসের বিশাল ক্ষেত রয়েছে। ফুল চাষ করে বেশ খুশি এখনকার কৃষকরা। প্রতিদিন আবুল কাসেম মার্কেট আর সাবু মার্কেট মিলিয়ে ১ লাখের বেশি ফুল বিক্রি হয়। ঢাকার ফুল বিক্রেতারা বান্ডিল বান্ডিল ফুল কিনে নিয়ে আসেন। এক বান্ডিলে ৩০০ করে ফুল থাকে। বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়। ফুলপ্রেমীদের জন্য তাই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে বিরুলিয়া।
কীভাবে যাবেন বিরুলিয়া
১. মিরপুর-১ থেকে আলিফ কিংবা মোহনা বাসে উঠে সরাসরি বিরুলিয়া ব্রিজ। তারপর স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞেস করে বিরুলিয়া গ্রাম ও জমিদার বাড়ি।
২. মিরপুর-১/১০ বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি বিরুলিয়া যেতে মিরপুর বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়া আবদুল্লাপুরগামী (মোহনা পরিবহন) বাসে চড়ে বসুন।
৩. মিরপুর-১ এর কাছেই অবস্থিত দিয়াবাড়ি থেকে মিনিবাসে চড়তে পারেন। যেভাবেই যান বেড়িবাঁধের হাইওয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ এগোলেই বিরুলিয়া সেতু পড়বে। বিরুলিয়া পৌঁছলে আপনাকে হেঁটে জমিদার বাড়িগুলো ঘুরে দেখতে হবে।
৪. আবদুল্লাহপুর/বাইপাইল/আশুলিয়া থেকে প্রথমে বেড়িবাঁধ আসতে হবে। তারপরে মিরপুর-১গামী যেকোনো গাড়িতে উঠে বিরুলিয়া ব্রিজ।
৫. সাভার বাসস্ট্যান্ডে থেকে লেগুনাতে সরাসরি বিরুলিয়া ব্রিজ যাওয়া যায়।
সময়ের আলো/আরএস/