প্রকাশ: শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৫:৫৩ এএম (ভিজিট : ২২৮)
দ্বীপ জেলা ভোলায় পুকুরের পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে জেলার বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মো. তাহাসিন নামের এক শিক্ষার্থী আবিষ্কার করল চাইল্ড সেফটি ডিভাইস।
প্রায় ৫০ গ্রাম ওজনের এই ডিভাইসটি যে শিশুটি ব্যবহার করবে সেই শিশুটি পানিতে ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর অভিভাবকের মোবাইলে কল চলে যাবে এবং তার বাসায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বেজে উঠবে। এমনকি সেই শিশুটি ওই মুহূর্তে কোথায় আছে তাও জানা যাবে ডিভাইসটির মাধ্যমে। এতে করে পুকুরের পানিতে পড়ে গেলেও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে ডিভাইস ব্যবহারকারী শিশুটি। এভাবেই কমে আসতে পারে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাঠান মো. সাইদুজ্জামান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুদে বিজ্ঞানী তাহাসিনকে সহযোগিতা করা হবে।
খুদে বিজ্ঞানী তাহাসিন বলেন, ছোটবেলা থেকেই বিশেষ কিছু দেখলেই তা নিয়ে গবেষণা ও আবিষ্কারের অদ্ভুত এক আগ্রহ সৃষ্টি হয় মনে। যেখানেই কোনো সমস্যা দেখেছি সেটি সমাধান করার চেষ্টা করেছি। তিনি জানান, তার লক্ষ্য এসব যন্ত্র সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া। সেই সঙ্গে গবেষণাকে আরও এগিয়ে নেওয়া। কিন্তু তার এগিয়ে যাওয়ার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ সংকট। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের চলমান অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখতে দৃঢ় প্রত্যয়ী তিনি। এই মেশিনগুলো আবিষ্কার করতে তার খরচ হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
তাহাসিনের বাবা আবদুল হালিম বলেন, ছোটবেলা থেকেই কিছু না কিছু করার চেষ্টা করত তাহাসিন। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করেছি। প্রশাসন বা সরকারের সহযোগিতার আহ্বানও জানান তিনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরাবরই সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় নতুন নতুন আবিষ্কার করে তাক লাগিয়েছে খুদে বিজ্ঞানী মো. তাহাসিন। ঢাকা মটস ইনস্টিটিউট অব টেকনলোজির ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তাহাসিন। এ ছাড়াও তাহাসিন আবিষ্কার করেছেন লাইফ সেফটি ডিভাইস। এই ডিভাইস ব্যবহারকারীর ওপর কেউ হামলা করলে হামলাকারী ২৫০ থেকে ৩৫০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক পাবে। মেধাবী এই খুদে বিজ্ঞানী একে একে আবিষ্কার করেছেন ফার্মার অ্যাসিট্যান্ট মেশিন, স্টার্ট থিপ টব সিকিউরিটি, স্মার্ট হর্ন, স্মার্ট ডাস্টবিন, স্মার্ট ওয়াটার টেপ, ডোজ অ্যালার্ম গ্লাস, স্মার্ট বৈদ্যুতিক টেস্টার, স্মার্ট স্টেবিলাইজার ও অটোমেটিক কার্টেইন ওপেনার। তিনি ১৫টিরও বেশি কাজে সফলতা পেয়েছেন।
তাহাসিন কৃষকের জন্য আবিষ্কার করেছেন ফার্মার সেফটি মেশিন। এই মেশিনটি ব্যবহার করলে কৃষক রোদ এবং বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবেন। তীব্র গরমে দেবে বাতাস। এ ছাড়াও কৃষকের জন্য আরেকটি ফার্মার হেলপার মেশিন আবিষ্কার করেছেন তিনি। এই মেশিনটি দিয়ে কৃষকরা জমিতে পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে পারবেন। এ ছাড়াও মেশিনটি পাঁচজন কৃষকের কাজ একাই করতে পারে। মেশিনটি পরিবেশবান্ধব।
তাহাসিনের আবিষ্কারে এলাকাবাসী প্রায়ই মুগ্ধ ও বিস্মিত হন। আবিষ্কার ও উদ্ভাবনীতে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা পেলে খুদে এ বিজ্ঞানী একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। খুদে বিজ্ঞানী তাহাসিন থাকেন উপজেলার ২ নং হাজিরহাট ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে চৌধুরী বাজার সংলগ্ন সোনারচর গ্রামে। তার বাবা মনপুরা ফাজিল মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক।
সময়ের আলো/আরএস/