ঐতিহাসিক ছোট সোনামসজিদ। পাশ দিয়েই চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়ক। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ৪০ টনেরও বেশি পণ্য নিয়ে পাঁচ শতাধিকেরও বেশি ভারী যান চলাচল করে। এ সময় দুই পাশের ভবনগুলোতে সৃষ্টি হয় কম্পন। ক্ষণে ক্ষণে দুলতে থাকে ঐতিহ্যের স্মারক সোনামসজিদও।
প্রত্নতত্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে মুনসুর ওয়ালী মুহাম্মদ কর্তৃক ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এটি নির্মাণ করা হয়। এরই মধ্যে পুরো স্থাপনাজুড়ে দেখা দিয়েছে অসংখ্য ফাটল। আলগা হয়ে গেছে পাথরের গাঁথুনি। চিড় ধরেছে মূল দেয়াল থেকে মিনার পর্যন্ত। বাদ যায়নি গম্বুজও। অথচ মসজিদটি রক্ষায় নেওয়া কম্পন নিরোধক বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি এখনও।
মসজিদের সীমানার মধ্যে সমাহিত বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কবর। পাশেই শায়িত আছেন আরেক বীর মেজর নাজমুল হক। আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে হজরত শাহ নেয়ামতুল্লার মাজার, তোহাখানা, দারাসবাড়ি মসজিদ ও মাদরাসাসহ বেশকিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা। সোনামসজিদসহ এসব স্থাপনা দেখতে প্রতিদিন চার শতাধিক পর্যটক আসেন। সুলতানি আমলের শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হলেও অসংখ্য ফাটল মর্মাহত করে তাদের।
পর্যটকদের মতো মসজিদটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান মসজিদটির ইমাম ও কেয়ারটেকাররাও। ঐতিহ্যের স্মারকটি রক্ষায় দ্রুত কম্পন নিরোধক বাইপাস সড়কটি নির্মাণের দাবি তাদের। ঐতিহ্যের স্মারকের এই যখন অবস্থা; তখন মসজিদটি রক্ষায় নেওয়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে চারপাশে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়। এরপর আর কোনো কাজ হয়নি। সোনামসজিদ শিবগঞ্জ, গৌড় গ্রুপ অব মনুমেন্টসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহীনুজ্জামান খান বলেন, সোনামসজিদ সংরক্ষণের গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০০৯ সালে বাইপাস সড়ক নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পের ওপর ২০১৩ সালে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভাও হয়। একই বছরের ২৩ মে সড়ক ও জনপথ এবং পরিকল্পনা কমিশনের যৌথ প্রতিনিধি দল সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শনও করেন। কিন্তু গত ১০ বছরেও প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি।
এ অবস্থায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও মনে করে বাইপাস সড়ক নির্মাণ অতি জরুরি। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সোনামসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আফতাবুজ্জামান আল ইমরান জানান, মসজিদ রক্ষায় খুব দ্রুতই কম্পন নিরোধক মহাসড়ক নির্মাণ হবে। এতদিন অর্থ ছাড় না পাওয়ায় কাজটি করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ্ মো. আসিফ। তবে চলতি বছর প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়েছে। দ্রুতই শুরু হবে এর কাজ। ঐতিহাসিক ছোট সোনামসজিদ। ইতিহাস যার প্রায় ৫৫০ বছরের।
দেশীয় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন, সুইজারলান্ড, কুয়েত, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন মসজিদটি এক নজর দেখতে। সুলতানি আমলের গৌড় নগরীর রত্ন হিসেবে খ্যাত মসজিদটি রক্ষায় তাই সংশ্লিষ্টরা দ্রুতই এগিয়ে আসবেন এমনটাই চাওয়া সবার।
সময়ের আলো/আরএস/