চিত্রা নদীর দুই ধারে গড়ে ওঠা দখল ও দূষণ রোধে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের পানি সম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে ইতিমধ্যে দখলবাজদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে চিত্রা নদীর বুকে গজিয়ে ওঠা স্থাপনা ও পুকুর উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র। চিত্রা নদী দখলমুক্ত হলে এক সময়ের প্রমত্তা নদীটি আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
ঝিনাইদহের চিত্রা নদীর অংশে বেশিরভাগ নদীজুড়েই অবৈধ স্থাপনা ও শত শত পুকুর রয়েছে। নদীর র্তীরবর্তী বাজার এলাকায় অবৈধ দোকানপাট ও বাড়িঘর তৈরি করেছে দখলবাজরা। সদর উপজেলার গান্না, জিয়ানগর, হাজরা, বংকিরা, মোহাম্মদপুর, লক্ষ্মীপুর ও গোবিন্দ এলাকায় নদী বলে পুকুর কেটে মাছ চাষ করা হচ্ছে। কোটচাঁদপুরের তালসার, ইকড়া, কালীগঞ্জ শহরের পুরাতন বাজার, বলিদাপাড়া, হেলাই, নিমতলা, নদীপাড়া ও ফয়লা এলাকায় দখল হয়ে গেছে চিত্রা। নদীর বুকে চাষাবাদ করছে মানুষ। নদীর মাটি কেটে ব্যক্তিগত কাজেও লাগাচ্ছেন কেউ কেউ। কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামে নদীর মধ্যে ৮টি পুকুর কেটে প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করছেন। ফলে একসময়ের প্রমত্তা নদী চিত্রা তার যৌবন হারিয়ে মৃতপ্রায়। দখলবাজদের কারণে নদীর কোথাও সরু কোথাও মৃত হয়ে হারানো ঐহিত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১২টি নদ-নদী রয়েছে। এরমধ্যে চিত্রা নদীর ১৭১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মধ্যে ঝিনাইদহ রয়েছে ৫৭ কিলোমিটার। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী, দোড়া, কালীগঞ্জ, তত্বিপুর ও মালিয়াট ইউনিয়নের ওপর দিয়ে যশোরের অভয়নগর উপজেলায় মিশেছে চিত্রা। এই নদীর উৎপত্তিস্থল চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে।
ঝিনাইদহের উন্নয়ন ফোরামের প্রতিনিধি অধ্যক্ষ মহব্বত হোসেন টিপু জানান, চিত্রা নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত খুবই যুগান্তকারী। জেলার নদ-নদীগগুলো বাঁচানোর এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ রাজনৈতিক সরকারের আমলে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা থাকে। ফলে প্রভাবশালীদের নগ্ন হস্তক্ষেপে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান, হালনাগাদ তথ্য মতে চিত্রা নদীর কালীগঞ্জ অংশে ৬২টি, কোটচাঁদপুরের লক্ষ্মীপুর বাজারে ১১টি ও একই উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামে ২১টি স্থাপনা ও পুকুর উচ্ছেদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা আগামী নতুন বছরের শুরুতেই এই উচ্ছেদ অভিযান পারিচালনা করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, নদী, খাল ও বিল সরকারি সম্পদ। বিশেষ করে ঝিনাইদহের ১২টি নদ-নদী দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে পারলে জেলার মানুষ উপকৃত হবেন। এ জন্য প্রথমেই জেলাবাসীকে সচেতনতার পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি জেলায় একটি করে নদীদূষণ ও দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার। সেই হিসেবে জেলায় চিত্র নদীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দখলদারদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। নদীর বেশিরভাগ অংশ কোটচাঁদপুর ও কালীগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। তিনি বলেন, চিত্রা নদীর ৩০ কিলোমিটারে ৯৪টি অবৈধ স্থাপনা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে রয়েছে ভবন, পুকুর, দোকান, বাজার, ঝুলন্ত স্থাপনা ও মুরগির খামার।
সময়ের আলো/জেডআই