প্রকাশ: বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ৭:০২ এএম (ভিজিট : ৩৬৬)
সবে অগ্রহায়ণের ১১ তারিখ। পঞ্জিকা অনুযায়ী শীতের এখনও বেশ কদিন বাকি। তবে জেলায় জেলায় ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসছে শীত। আর সেই আমেজে সাড়া দিয়ে সন্ধ্যার পর ফুটপাতে ওম ছড়াচ্ছে ধোঁয়া ওঠা পিঠা। ঝালকাঠি জেলা শহরসহ উপজেলা ও প্রত্যন্ত এলাকার বাজারগুলোর ফুটপাতে বসেছে শীতকালীন পিঠার দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে বেশ রাত পর্যন্ত এসব দোকানে বাড়ছে লোকের আনাগোনা। চিতই পিঠা, ভাপা পিঠাসহ নানান পদের পিঠা বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের এ দোকানগুলোয়। তবে চিতই বা স্থানীয় ভাষায় কাঁচিখোঁচা পিঠার ক্রেতাই বেশি।
শুধু ঝালকাঠি সদরেই নয়, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়াতেও শীতের আমেজ শুরু হতেই অলিগলি, পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে পিঠাপুলির পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ীরা। বাহারি সব পিঠাপুলি নজর কাড়ছে পিঠাপ্রেমীদের। পড়ন্ত বিকেল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা হয়ে বেশ রাত পর্যন্ত পিঠাপুলির দোকানগুলোতে বিক্রির ধুম পড়ে। সন্ধ্যার পর থেকেই উপজেলায় জনবহুল অলিগলি ও রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে দাঁড়িয়ে বা বসে লাইন দিয়ে পিঠা খেতে দেখা যায় অনেককেই।
শহরের পুরাতন স্টেডিয়াম এলাকার পিঠা বিক্রেতা মজিবুর রহমান (৫৫) জানান, প্রতিদিন ১২-১৩ কেজি চালের গুঁড়োর পিঠা বিক্রি করেন তিনি। পিঠা বিক্রি করে প্রতিদিন তার বেশ উপার্জন হয়। পিঠার সঙ্গে শুঁটকি, মরিচ, সর্ষে ভর্তা ও গুড়-নারকেলের মিঠাই দেওয়া হয়। ভর্তাগুলো বিনামূল্যে দেওয়া হলেও নারকেল-মিঠাই পিঠার সঙ্গে দশ টাকা করে নেওয়া হয়। প্রতিটি চিতই পিঠার জন্য নেওয়া হয় ৫ টাকা করে। মৌসুমের শুরুতেই প্রতিদিন এক-দেড় হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার। পুরো শীতের মৌসুমে তার আয় ভালোই হবে বলে জানান মজিবুর রহমান। শীত মৌসুমে প্রতিটি বাড়িতে পিঠাপুলি বানানোর আয়োজন গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে ঘরে ঘরে পিঠাপুলি তৈরির আয়োজন এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। ব্যস্ততা ও পারিপাশির্^ক সমস্যায় নিজ হাতে পিঠাপুলি তৈরির আয়োজন কমে গেলেও থেমে নেই পিঠাপ্রীতি ও ভোজন। ঝামেলা এড়াতে বাড়ির আয়োজনের চেয়ে এখন দোকানের পিঠার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন তারা। আর এ পিঠা বিক্রি করেই জীবিকা চালাচ্ছেন অনেকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চুলার অল্প আঁচে ধোঁয়া উঠছে। তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু চিতই, ভাপাসহ অন্যান্য পিঠা। আর চুলা থেকে নামানোর পর মুহূর্তেই তা চলে যাচ্ছে অপেক্ষমাণ ক্রেতার হাতে। ক্রেতারা রাস্তার পাশে দোকানে দাঁড়িয়ে অথবা বসে সেই পিঠা খাচ্ছেন। কেউবা নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের জন্য।
রাজাপুর শহরের বাইপাস মোড়ের পিঠা বিক্রেতা মো. আবদুস সালাম বলেন, বছরের এই সময়টায় শীতকালীন পিঠা বিক্রি বেশি হয়। আর এই ব্যবসায় আগে ভালো লাভ পাওয়া গেলেও এখন সবকিছুর দাম অতিরিক্ত হওয়ায় লাভ তেমন নেই। তবে যা উপার্জন হয়, তাতেও একেবারে কম হয় না।
চিতই পিঠা খেতে আসা পাশের একটি বাস কাউন্টারের পরিচালক মো. রায়হান বলেন, শীতে চুলার পাশে বসে পিঠা খাওয়ার যে ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, এখন তার দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি হওয়ার কারণে চুলার পাশে গরম গরম পিঠা খাওয়ার একটু সুযোগ পাওয়া যায়।
রাজাপুর উপজেলার বাঘরি বাজারের পিঠা বিক্রেতা মো. পান্নু হাওলাদার বলেন, আগে প্যাডেলচালিত রিকশা চালাতাম। পাঁচ বছর যাবত এখানে পিঠা বিক্রি করছি। প্রতিদিন ২৫০-৩০০ পিস পিঠা বিক্রি হয়। সব খরচ বাদে প্রতিদিন গড়ে ৭শ টাকা লাভ হয়। এতেই সংসার চলে।
সময়ের আলো/জেডআই