মানুষ মাত্রই ভুলের শিকার। পৃথিবীতে চলতে ফিরতে স্বভাবতই সবাই ভুল করে। পাপকাজে নিমজ্জিত হয়। কেবল নবী-রাসুলকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় অনুগ্রহে সব ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে হেফাজত করেছেন। কারও দ্বারা কোনো ভুল কিংবা পাপকর্ম সংঘটিত হলে এর থেকে পরিত্রাণের জন্য মহান প্রভু তওবার দরজা খোলা রেখেছেন। তওবা মানে সব ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে ফেলা। আল্লাহ তায়ালার দয়া, অনুগ্রহ ও ক্ষমা অপরিসীম। তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া মুমিনের জন্য অনুচিত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৫৩)। তওবা দ্বারা সব ধরনের গুনাহ মাফ হয়। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তওবা করো, তা হলে তোমাদের রব তোমাদের পাপগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৮)। কেউ যদি আন্তরিকভাবে তওবা করে তা হলে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ করে সে জায়গা নেকি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেবেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘কিন্তু যারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৭০)
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বনি ইসরাইলের একটি অভূতপূর্ব ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তি নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করার পর তার মধ্যে অপরাধবোধ জেগে ওঠে। সে তওবার আকাক্সক্ষায় বাড়ি থেকে বের হয়। অতঃপর একজন পাদ্রিকে জিজ্ঞেস করে, আমার জন্য কি তওবার রাস্তা খোলা আছে? পাদ্রি বলল, না। সে তখন পাদ্রিকেও হত্যা করে ফেলে। একশ মানুষকে হত্যা করার পর পুনরায় সে তওবার আকাক্সক্ষায় ঘুরতে থাকে। যাকে পায় তাকেই জিজ্ঞেস করে, আল্লাহ তায়ালা কি আমায় ক্ষমা করবেন? এক ব্যক্তি তখন তাকে বলল, তুমি অমুক এলাকায় চলে যাও, সেখানে একজন আলেম আছেন, তিনি তোমাকে তওবার পথ বাতলে দেবেন। সে পরম আগ্রহে ওই এলাকার দিকে রওনা করে। কিন্তু পথিমধ্যে তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসে। তবু হামাগুড়ি দিয়ে আলেমের বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। একটুখানি যেতেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সেসময় জান্নাত ও জাহান্নামের ফেরেশতারা তার রুহ নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। জাহান্নামের ফেরেশতারা বলে, সে ছিল পাপিষ্ঠ, একশ মানুষের হত্যাকারী, তাকে আমরা জাহান্নামে নিয়ে যাব।
জান্নাতের ফেরেশতারা বলে, সে আন্তরিকভাবে তওবা করতে বের হয়েছিল, এ জন্য তাকে আমরা জান্নাতে নিয়ে যাব। আল্লাহ তায়ালা লোকটির মৃত্যুর জায়গা থেকে আলেমের বাড়ির দিকের রাস্তাকে বললেন, তুমি সংকীর্ণ হও। আর তার বাড়ির দিকের রাস্তাটিকে বললেন, তুমি প্রলম্বিত হও। অতঃপর তিনি ফেরেশতাদের বললেন, মৃত্যুবরণের জায়গা থেকে তোমরা দুই দিকের রাস্তা পরিমাপ করো। যেদিকের রাস্তা সংক্ষিপ্ত হবে তার ওপর সে হুকুম প্রয়োগ করা হবে। ফেরেশতারা দুদিকের রাস্তা পরিমাপ করে দেখল, তার বাড়ি থেকে আলেমের বাড়ির দূরত্ব এক বিঘত কম। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিলেন। ফেরেশতারা তাকে জান্নাতে নিয়ে গেল (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪৭০)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের পাপমুক্ত জীবন দান করুন।
মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা
সময়ের আলো/আরএস/