কাজী ইউসুফ আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি। বর্তমানে তিনি আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান। আখাউড়া থানায় সম্প্রতি করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় তিনি আসামি। বিএনপি নেতা হয়েও বিএনপির করা মামলা মাথায় নিয়ে বেড়াচ্ছেন।
কাজী ইউসুফ বলেন, আমি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মামলার কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস ছাত্তার মিয়া। তিনি ২১ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ভারতে তার ফুফার বাড়িতে সস্ত্রীক বেড়াতে গিয়েছিলেন। তার পাসপোর্ট ও ভিসা তাই প্রমাণ করে। তিনিও বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি।
আবদুস ছাত্তার মিয়া বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু ওই সময় আমি দেশেই ছিলাম না, তা হলে এই ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত কীভাবে। কাজী ইউসুফ ও আবদুস ছাত্তার মিয়ার মতো অনেকেই অপরাধ না করেও বিস্ফোরক আইনের মামলার আসামি হয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার ঘটনাবলি এবং বিগত সরকারের আমলের ইস্যুতে মামলা হচ্ছে। মামলার পাশাপাশি চলছে মামলা বাণিজ্য। এসব মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। ব্যক্তিগত শত্রুতা, এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্বের কারণে অনেক নিরীহ মানুষকে আসামি করার অভিযোগ রয়েছে। কোনোদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না ও ছাত্র-জনতার আন্দোলন ভিন্নদিকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা ছিল না এমন ব্যক্তিও আসামি হয়েছেন। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ মামলা আতঙ্কে ভুগছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৬টি মামলা হয়েছে আখাউড়া থানায়। এর মধ্যে বর্তমান গণবিপ্লবী সরকারকে উৎখাত চেষ্টার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ১টি মামলায় বাদী পুলিশ। বিস্ফোরক আইনে বাকি ৫টি মামলা করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হলেন ১৯৬ জন। আরও ৫০৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ২৯ জন।
আখাউড়া পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. শাকিল বাদী হয়ে চলতি মাসের ১২ তারিখে আখাউড়া থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ১৩৭ জনের নামসহ অজ্ঞাত আসামি করা হয় অক্ষাত আরও ২৫০ জনকে। এ মামলায় অনেক নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তেমনি একজন এ মামলার আসামি হীরাপুর গ্রামের রিপন মিয়া। তিনি বলেন, আমি গ্রামের একজন খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষ। কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। যে ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সে ঘটনার দিন বা তার আগে পরে ৪-৫ দিন আমি আখাউড়ায় যায়নি। এলাকার দ্বন্দ্বের কারণে আমাকে আসামি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রতিবেদকের সঙ্গে ফোনে কথা হয় প্রবাসী আরিফ হোসেনের। তিনি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব যায়। তখন থেকে তিনি সৌদি আরবে আছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় করেছেন লেখালেখি। এরপর অক্টোবরের ৯ তারিখে ছুটি কাটাতে দেশে আসেন। দেশে আশার ২০-২২ দিন পর তিনি জানতে পারেন ছাত্র আন্দোলনের সময়ের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় তিনি আসামি। এরপর তাড়াহুড়ো করে আবার সৌদি আরবে ফিরে যান। ফিরে গিয়ে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে মামলার এজাহার থেকে নাম কাটিয়েছেন। আরিফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমি আমার অবস্থান থেকে আন্দোলন করেও আমার বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কি কখনো হয়রানির হাত থেকে মুক্তি পাবে না। সর্বশেষ গত সোমবার গণবিপ্লবী সরকারকে উৎখাত চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে ১৫ জনের নামসহ আরও ৭০/৮০ জন অজ্ঞাত নাম দিয়ে ১টি মামলা করেন।
বিস্ফোরক আইনে ১টি মামলার বাদী আখাউড়া পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. শাকিল। তার সঙ্গে মুঠোফোনে মামলার বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, সরাসরি এসে কথা বলেন।
আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জানান, কোনো নিরীহ বা নির্দোষ মানুষকে আসামি করা হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী সাধারণ মানুষের ক্ষতি করেছে মূলত তারাই আসামি হচ্ছেন। বিএনপি নেতা কাজী ইউসুফের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, মেম্বার কাজী ইউসুফ উত্তর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি না। কৃষক দলের সভাপতি হলেন অন্য ইউসুফ।
মামলার বিষয়ে আখাউড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল হাসিম বলেন, মামলা নেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই করার সুযোগ থাকে না। তবে নেওয়ার পর তদন্তসাপেক্ষে যারা জড়িত থাকবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। যদি কেউ জড়িত না থাকে তাদেরকে হয়রানি করা হবে না।
সময়ের আলো/আরএস/