প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:২৬ এএম (ভিজিট : ২৩০)

বাংলাদেশের দেড় কোটির বেশি মানুষ অভিবাসী হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ইতালি ও শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ যুক্তরাজ্যে আছেন। বাকিদের মূল গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশের তুলনায় প্রতিবেশী ভারতের অনেক বেশি অভিবাসী কর্মী বৈধভাবে ইউরোপে কাজ করছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মোটা দাগে বাংলাদেশ পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে এখনও শতভাগ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনি। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে অনেক অভিবাসী ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এভাবে যাওয়ার সময় অনেকে ভয়াবহ বিপদে পড়েন, অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। অনেকের ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে, অনেকে ইউরোপে আশ্রয় নিতে পারলেও পরবর্তী সময়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অথচ বৈধ পথে ইউরোপে কাজের সুযোগ থাকলেও আমরা অনেকেই সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানি না। আমরা জানি না, কীভাবে এই সুযোগ কাজে লাগানো যায়। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে।
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা আছে। বৃহস্পতিবার সময়ের আলো থেকে জানা যায়, এই সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে সেসব দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব। সেসব অঞ্চলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কী কী চ্যালেঞ্জ এবং তা উত্তরণের পথ কী, সেগুলো নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। পূর্ব ইউরোপের সম্ভাবনাকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের যেসব সম্ভাবনা রয়েছে, তার মধ্যে জনশক্তি রফতানি এই সময়ের মূল বিষয়। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে জনসংখ্যা খুব কম, বিশেষ করে সেখানে তরুণ জনগোষ্ঠীর খুব অভাব। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর যোগ্য তরুণ কর্মীরা সরাসরি ইউরোপে গিয়ে কাজ করে। যে কারণে সেখানে তরুণ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর চাহিদা প্রচুর, যা বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তিকে দক্ষ করে সেখানে পাঠাতে হবে। শ্রমবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিয়া, নর্থ মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রোর মতো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণের দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতদিন খুব স্বল্প পরিমাণে জনশক্তি পাঠানো সম্ভব হলেও এখন সেখানকার কৃষি, গার্মেন্ট, ফ্যাক্টরি, হোটেলগুলোয় হাজার হাজার কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে।
আমরা মনে করি, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইমেজ কাজে লাগানোর দারুণ সুযোগ আছে। ড. ইউনূসকে সামনে রেখে শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা হলে পূর্ব ইউরোপের শ্রমবাজার ভারত ও নেপালের হাতে চলে যাওয়া ঠেকানো সম্ভব। এর মাধ্যমে তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের বড় বিকল্প শ্রমবাজার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জিডিপিতেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারবে পূর্ব ইউরোপের নতুন শ্রমবাজার।