চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হওয়ার অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের নামে আদালতে মামলা করেছেন যুবলীগ কর্মী কফিল উদ্দিন।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) তিনি আদালতে মামলা করেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে দায়ের করা মামলায় কফিল উদ্দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ওই দিনই আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার (২০ নভেম্বর) মামলার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ছিনতাই অস্ত্র, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে থানায়। নগরীর পাশাপাশি আনোয়ারা থানায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
এদিকে কফিলের মামলায় আসামিদের মধ্যে আরো আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মহিবুল হাসান চৌধুরী, পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ, বিপ্লব কুমার সরকার, সিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি ওবায়দুল হক, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ মহসীন, জাহিদুল কবির, এসআই বোরহান উদ্দিন, খাজা এনাম এলাহীসহ মোট ২৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, কফিল উদ্দিন সব সময় চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মসূচিতে সরব ছিলেন। যুবলীগের আলোচিত নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী হিসাবে পরিচিত কফিল কিভাবে আন্দোলনে হামলার শিকার হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কোতোয়ালি থানা পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় থানায় দায়ের করা একটি মামলায় কফিল অন্যতম আসামি। মো. রাইয়ান নামে এক যুবক গেল ১০ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় ২৭৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। সেই মামলার আসামি কফিল নিজেই বাদী হয়ে মামলা করলেন শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।
কফিল উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তিনি পতিত হাসিনা সরকারের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। তাই অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিবাদে তিনি শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মামলার বিবরণে কফিল উল্লেখ করেন, তিনি গত ৪ আগস্ট নগরের নিউমার্কেট গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ওই দিন আসামিরা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে কফিল হাতে আঘাত পাওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হন। ঘটনায় জড়িত আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে দেরি হওয়ায় মামলা করতে দেরি হয়।
পুলিশ জানায়, কফিল নগরীর একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী। যুবলীগ নেতা বাবরের অনুসারী কফিল নগরীতে ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিতেন। তাকে বিভিন্ন মামলায় পুলিশ একাধিকবার গ্রেফতার করেছে। দীর্ঘদিন কারাগারেও ছিলেন।
এ ব্যাপারে সিএমপির এডিসি (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ সময়ের আলোকে বলেন, এ ধরনের মামলার দায়েরের খবর আমরা পেয়েছি। মামলা দায়ের করলেতো আর হবে না। তদন্তে যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয় তবে বাদীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ও দণ্ড বিধির ২১১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে। এ ব্যাপারে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি মিথ্যা মামলার বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় কফিল অন্যতম আসামি। সেই কফিল নগরীতে সক্রিয় একটি মামলাবাজ চক্রের যোগসাজসে উল্টো নিজে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এতে মূলত মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমে সক্রিয় চাঁদাবাজ গ্রুপের হয়ে কাজ করেছেন কফিল।
কফিলের সাথে এক আইনজীবীর ফোনে কথা হয় মামলা নিয়ে। ৫ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করেন কফিল নিজেই। মূলত চট্টগ্রামে মামলাবাজি নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে। যারা ছাত্র আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের টার্গেট করে মামলার বাদী বানানোর ফাঁদ তৈরি করেন। ওই ফাঁদে ফেলা হয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিত্তশালীদের। মামলার আগে ড্রাফট করা এজাহারের কপি পৌঁছে দেয়া হয় মামলার বিবাদীর কাছে। এরপর টাকার প্রস্তাবে দফারফা না হলেই মামলা করা হয় থানা কিংবা আদালতে। এই সিন্ডিকেটের যোগসাজসে কফিল মামলা করেছে এমন ধারনা সংশ্লিষ্টদের।
সময়ের আলো/জেডআই