
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্র এলাকায় অবস্থিত রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামার।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে আছে চিনিকলের উৎপাদন। একই সঙ্গে বন্ধ আখের আবাদও। এ সুযোগে একদল ভূমিদস্যু দখল করে নিয়েছে ১ হাজার ৮৪২ একর জমির এ খামারটির অধিকাংশ জমি।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কিছু মানুষকে খামারের জমির মালিকানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তারা সন্ত্রাসী কায়দায় দখল করেছে অধিকাংশ জমি। ভূমিদস্যুদের নানামুখী হুমকির মুখে চিনিকল কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না চিনিকলের এই খামারে। বন্ধ চিনিকলের এই খামারের অফিস ও আবাসিক এলাকাটি তাই একরকম বিরান ভূমি হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন।
তবে এর মাঝেই সবার চোখের আড়ালেই খামারের অফিস ও আবাসিক এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা খামারের অফিস ও আবাসিক এলাকার পাশের বাগান ও পুকুরের পাড়ে বেড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক কাজুবাদাম গাছে ফলতে শুরু করেছে কাজু বাদাম। এর ফলে ওই এলাকার মাটিতে কাজু বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলার কৃষিভিত্তিক একমাত্র ভারী শিল্পকারখানা রংপুর চিনিকলের মালিকানাধীন সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামারে আখের পাশাপাশি সাথি ফসল চাষ করা হতো। এরই অংশ হিসেবে একসময় এখানকার বাগান ও পুকুরপাড়ে অনেক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়েছিল অনেকগুলো কাজুবাদাম গাছের চারা। এগুলোই বড় হওয়ার পর এখন ধরেছে বিপুল পরিমাণ কাজু বাদাম। কয়েক বছর ধরে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এই খামারের ১০ একর জমির অর্ধশতাধিক গাছে শোভা পাচ্ছে কাজু বাদাম। তবে অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে গাছের এই মূল্যবান ফলগুলো। পরিচর্যার অভাবে এর উৎপাদন ক্ষমতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় পরিপক্ব হওয়ায় আগেই গাছের কাজু বাদামগুলো চুরি হয়ে যায়।
উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে গুমানীগঞ্জ, সাপামারা, কাটাবাড়ী, কামদিয়া, রাজাহার, শাখাহার ইউনিয়নগুলো বরেন্দ্র এলাকায় অবস্থিত। এই এলাকার মাটিতে কাজু বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাজু বাদাম সাধারণত বন্যাপ্রবণ এলাকার বাইরে পাহাড়, টিলা ও উঁচু এলাকায় ভালো ফলন দেয়। বাজারে এর উচ্চ মূল্য থাকায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করেও লাভবান হওয়া সম্ভব। দেশের অনেক এলাকায় কাজু বাদাম উৎপন্ন হলেও গুণাগুণ, চাষ উপযোগী জমি, গাছের পরিচর্যা এবং গাছ থেকে ফল আহরণ এবং তা সংরক্ষণ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় কাজু বাদাম চাষে তেমন আগ্রহ নেই সাধারণ কৃষকদের মাঝে।
রংপুর চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার খামারের কার্যালয়ের আবাসিক এলাকার ভেরভেরা বিলের ওপর প্রায় ১০ একর জায়গায় ৬০-৭০টি কাজু বাদামের গাছ লাগানো হয় পরীক্ষামূলকভাবে। পরিচর্যা না থাকায় বেশ কিছু গাছ মারা গেলেও বর্তমানে প্রায় ৫০টি গাছ বেঁচে রয়েছে। যেগুলো থেকে প্রতি বছর নিয়মিত ফলন আসছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় বেশিরভাগ গাছের ফল নানাভাবে নষ্ট হচ্ছে। আবার যাদের কাজু বাদামের ফল সম্পর্কে ধারণা রয়েছে তারাও বাধাহীনভাবে বাগানের গাছ থেকে বাদাম তুলে নিয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিনিকল বন্ধ থাকায় আখের বদলে এখানকার আবাদযোগ্য প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে চাষ হতে পারে এই দামি কৃষিপণ্যটির।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মেহেদী হাসান কাজু বাদাম চাষ প্রসঙ্গে বলেন, কাজু বাদাম সাধারণত পাহাড়ি ও শুষ্ক মাটি এলাকায় ভালো গাছ হয় এবং ফলন পাওয়া যায়। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বরেন্দ্র এলাকার পরিত্যক্ত উঁচুস্থানে এই বাদামের বাগান গড়ে তোলা যেতে পারে। তবে কাজু বাদামে ফল আসতে প্রায় দশ বছর সময় লাগে। দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় কাজু বাদাম চাষে অনেকেই আগ্রহ দেখায় না। তবে দীর্ঘমেয়াদি হলেও এই গাছের ফাঁকে পরিত্যক্ত স্থানে আদা, হলুদসহ ছায়া সহনশীল ফসলের চাষ করে কাজু বাদাম না হওয়া পর্যন্ত পুষিয়ে নেওয়া যায়। অর্থকরী ফসল কাজু বাদাম চাষ করতে আগ্রহীদের উপজেলা কৃষি অফিস সার্বিক সহায়তা দেবে।
সময়ের আলো/আরএস/