সদানন্দপুর
শফিক ইমতিয়াজ
সদানন্দপুর যাব, অনুপম মাতৃস্থলী-
ওখানে আমার পূর্বজন
খররোদ ও অতিবৃষ্টির-কালে ব্যবহারযোগ্য মানবিক ছাতা
আর সান্ধ্যসাঁজালের ধূপ রেখে গেছে।
বহুদূর পথ, সময়ের তাড়া
প্যাঁচালপ্রিয় মানুষ এড়িয়ে এগোই মাইলফলক ধরে
দুপাশে বৃক্ষনিধন, ক্ষতিগ্রস্ত সবুজ সম্ভ্রম
মাঠেও বাজারমুখী গুটিকয় ফসলের দৈন্য
অলৌকিক নদীপাশে গড়ে ওঠা শুষ্ক লোকালয়
যত্রতত্র বিচরণরত গবাদি, তাদের উৎকট লেজ!
সদানন্দপুর এসেই অবাক-
কে বা কারা যে মাটিবিমুখ অচেনা নাম দিয়েছে এর!
ভ্রমণে এই প্রথম একদল হিমরং লোকের সাথে কথাÑ
তারা বলে, এলাকার নাম পাল্টে গেছে
পথে পুরানা মাইল-ফলকের লেখা, দ্রুত মুছে ফেলা হবে।
চোখ মেলি, আশপাশে কী যে এক শীতল উল্লাস
অজৈব সজ্জায় মৃতপ্রায় একদা-র হৃদয়প্রাঙ্গণ!
হায় মাইল-ফলক
তোমাদের বুকে লেখা আজও যে মাতৃস্থলীর নাম
সেখানে রক্ষাকবচ মানবিক ছাতা আর
নিবারক ধূপ রাখার জন্য যে এক পঙ্ক্তি জায়গা আছে
কীভাবে বিশ্বাস করি!
তুমি
তাহমিনা কোরাইশী
একদিন বৃষ্টির মতো তোমার শরীরে লেপ্টে ছিলাম
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমরাই দুজন
রিকশায় হুড হয়নি তোলা, ছিল না তো ছাতাটিও মাথায়
রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে ছিল না তো কেউ
জলের কাপড় জড়িয়ে...
চোখে মুখে ঠোঁটে দীর্ঘ গাঢ় জলেরই চুম্বন
খরায় পোড়া এই দেহ-মন।
তোমার চোখে ছিল যৌবন নদী
ডুব সাঁতারে কূলহীন অথই পাথার
ভাষাহীন শব্দরা, ঝমঝম মূর্ছনায় উন্মাদ
অজস্র তরঙ্গ নেশাঘোর ঝরে বৃষ্টিফুল
যুগল মাতাল আদি বুনোসাথি আমরাই
শরীরজুড়ে বয়ে চলে জলের কলতান
প্রেমচিহ্ন যতি আঁকা নকশি কাঁথায়
জলের আলিঙ্গনে ক্ষণিক সময়
প্রেমের খণ্ডকালীন মায়াপথখানি
ঢেকে রেখো, মেঘজলের উদোম শরীর।
ভেতরে তুমি জুতসই না
নাইমুল করিম
বাইরের পোশাকে নিজেকে প্রিন্সেস মাহরা ভাবলেও
ভেতরে তুমি জুতসই না
চাইলে আনন্দে ছুড়ে ফেলতে পারো কারোর হৃদয়ের
সরল সহজ ভালোবাসা
দুনিয়াতে হয়তো এখনও তোমার অজানা রয়ে গেছে
কখনো-সখনো বিচ্ছেদেই সুখ লুকানো থাকে।
যে শব্দগুচ্ছ প্রেম জানে না
গাউসুর রহমান
সুন্দরের ভেতর থেকে যে সুন্দর বেরিয়ে আসে
সে সুন্দর আমি দেখিনি
সময়ের পাহারায় জীবনের যত অবসাদ
সবকিছু অন্ধকার করে রাখে আমায়।
আমার আঙুলে যে শব্দগুচ্ছ দোলে
সেগুলো মুঠোভর্তি প্রেম জানে না
নদীর গান শোনে না
জলের গান বোঝে না
জীবনের ধুলোগুলো নিয়ে
উড়ে উড়ে যায় অজানায়।
কবিতার জন্যে কেল্লাফতে কিস্তিমাত শব্দগুচ্ছ
বিচারাধীন শব্দের গারদে কবিতা থাকে না
শব্দের ল্যাম্পপোস্ট অন্ধকার রেখে
আলোকিত হতে পারেন না কবি।
জীবনের সব তুচ্ছ কথা তুচ্ছ ঘটনা
নানা পথের বাঁকে বাঁকে দূরে :
স্কুলের লাস্ট বেঞ্চের ছাত্রের মতো
আমার জীবনের মোড় যায় না ঘুরে।
নবান্ন
আসাদুল্লাহ মুক্তা
মেঘ ভাঙা হেমন্তের আকাশে ঝিরঝিরে বাতাস
প্রত্যাশা ভরাট দুপুরের স্নিগ্ধ ঝলমল রোদ
শরতের শেষ বিকালে কাশফুলের ধবধবে ঢেউ
বিনম্র খেলা করে বিচিত্র মেঘের মেলায়।
সন্ধ্যায় শিশির ভেজা ঘাসের ডগায়-
ভিজে যায় পায়ের আঙুল
শিরশির শীতের বন্দরে ফিরতে যায় মনের নোঙর
কুয়াশার রুপালি রঙ মেখে-
বিরহের গান গায় রাতের পাখি
গৃহবধূর সুখ সুখ আনন্দে
নেচে ওঠে নতুন ধানের নবান্ন।
সময়ের আলো/আরএস/