প্রকাশ: রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪, ৫:৫৭ এএম (ভিজিট : ৩২৪)
আগের সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) এখনও বহাল থাকায় দেশে নতুন এলএনজি প্রকল্প ও টার্মিনালগুলোর জন্য প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে। এতে অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতি মুখে পড়বে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভর (এলএনজি) এসব প্রকল্পের কারণে দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে-এমন আশঙ্কার কথা এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
‘বাংলাদেশের জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের এলএনজি প্রকল্পের ব্যয় ও একটি টেকসই ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়। মার্কেট ফোর্সেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণ বিদ্যুৎ খরচের চাপে রয়েছে এবং ব্যয়বহুল আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরতা অব্যাহত থাকলে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এলএনজিকেন্দ্রিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের পরিবর্তে তা ব্যবহারে ৬২ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব, যা দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দ্বিগুণ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবিত ৪১টি নতুন গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন হবে, যা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাগুলোর প্রকোপ বাড়াবে এবং বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম খারাপ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালনি ও এলএনজির আমদানি দেশের জন্য আর্থিক বোঝা এবং প্রাণ-প্রকৃতির বিনাশের সঙ্গে জড়িত। বিগত সরকারের সময়ে এনার্জি সেক্টরে পরিকল্পনা করা হয়। বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ট্রান্সন্যাশনাল পুঁজির পলিসি উন্নয়নে কাজ করে। বিগত সরকার যে এনার্জি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে তা অনিবার্য ছিল না। এর পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তিগত বিকাশ দামে সস্তা। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।’
দেশি বিশেষজ্ঞদের বাদ দিয়ে বিদেশিদের দিয়ে এ জ্বালানি মহাপরিকল্পনা তৈরির অভিযোগ করে তিনি নীতিগত জায়গা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে এ মহাপরিকল্পনা বাতিলের তাগিদ দেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র যা আছে তার মধ্যে দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরকার নেই। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে যে, ২০৪১ সাল নাগাদ ৬৫ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৫০ সাল নাগাদ আমাদের ৯০ হাজার মেগাওয়াট দরকার হবে। এটা একটা আজগুবি চাহিদা তৈরি করা হয়েছে। তার ভাষ্য, প্রকৃতপক্ষে ২০৪১ নাগাদ ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন নেই। এলএনজির জন্যও নতুন অবকাঠামোর প্রয়োজন নেই।
সময়ের আলো/আরএস/