ই-পেপার শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫
শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫
ই-পেপার

শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫

বিচ্ছিন্ন দ্বীপে একটি সেতুর অপেক্ষায়
প্রকাশ: শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪, ৪:২৩ এএম  (ভিজিট : ৫৭৪)

নিভৃত গ্রামের চারপাশে বিভিন্ন ফসলের সমারোহ। মাঝখানে মরা নদের দ্বীপ। সেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করেন শতাধিক পরিবার।

শুকনো মৌসুম ছাড়া পানিতে থইথই করে চারিধার। সেখানে চলাচলের একমাত্র ভরসা ড্রামের ভেলা। ভোগান্তি কেবল এখানেই থেমে নেই। পুরো দ্বীপজুড়ে কোথাও নেই চলাচলের উপযোগী রাস্তা। এখনও কৃষিজমির আইল ধরে হেঁটে যেতে বাধ্য হন স্থানীয়রা। কৃষিপণ্য পরিবহনে উপযুক্ত রাস্তাঘাট না থাকায় কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলের উৎপাদিত ফসল নিয়ে ভোগান্তি যেন জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে বাঁধা পড়ে আছে। বছরের পর বছর ধরে একটি সেতু আর চলাচলের সড়কের অপেক্ষায় দিন কাটে তাদের।

এ দুর্ভোগের চিত্র গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর পুরান লক্ষ্মীপুর এলাকার। সম্প্রতি সেখানে সরেজমিন দেখা যায়, মরা ঘাঘট নদের পানির ওপর দিয়ে ড্রামের ভেলায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন বেশ কিছু নারী-পুরুষ। এমন দুর্ভোগই নিত্যসঙ্গী বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর ঘেঁষে একটি গ্রামের নাম পুরান লক্ষ্মীপুর। একসময় এর পাশ দিয়ে ছিল ঘাঘট নদ। ইতিপূর্বে ঘাঘটের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় সৃষ্টি হয় মরা নদের। এলাকাটিকে বকশীরদহ নামে অনেকে চেনেন এবং জানেন। 

বকশীরদহের ওপারে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করেন বেশ কিছু পরিবার। চলাচলের রাস্তাঘাট না থাকায় পানির ওপর দিয়ে ড্রামের ভেলায় যাতায়াতই একমাত্র বিকল্প। ভেলায় ওপারে পৌঁছে হেঁটে যেতে হয় জমির আইল দিয়ে। স্কুলগামী বাচ্চারা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে বিষয়টি নিয়ে। যুগের পর যুগ মানুষ চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তি সঙ্গী করেই বসবাস করছেন এখানে।

রবিউল ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী জানান, শুধু সেতু নয়, নেই রাস্তাঘাট। ভেলায় ওপারে পৌঁছে অন্যের জমির আইল দিয়ে খানিকটা হেঁটে গিয়ে মূল সড়কে উঠতে হয়। এ পাশে সেতুসহ একটি রাস্তা নির্মাণের দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ভোগান্তির শেষ নেই এখানকার মানুষের। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য প্রয়োজনে যাতায়াতে ভরসা ড্রামের ভেলা। একটি সেতু ও রাস্তার জন্য যুগের পর যুগ ভুগছি। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে এ বিষয়ে কোনো সুফল মেলেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থায় আমাদের এলাকার সন্তানদের সঙ্গে বিয়ে করাতে নারাজ থাকেন এলাকার বাইরের লোকজন। অনেক ক্ষেত্রে সব ঠিকঠাক থাকলেও বিয়ে ভেঙে যায়। ফলে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে অনেকটা বেগ পেতে হয় দ্বীপবাসীর।

কথা হয় বাবলু মিয়া নামে আরেক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে খাল পারপারে নিজেদের টাকায় বানানো হয় বাঁশের সাঁকো আর ড্রামের ভেলা। এই বকশীরদহের ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানানো হলেও কেউ তাতে কর্ণপাত করেননি।

স্থানীয় কৃষক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, বকশীরদহের ওপারে শতাধিক হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। সেখানে শাকসবজি-ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। পথঘাট না থাকায় ওইসব ফসল এপারে নিয়ে আসা খুবই কষ্টকর। এতে করে কখনো কখনো উৎপাদন ব্যাহত হয়। বকশীরদহের ওপর সেতু নির্মাণ জরুরি।

এ বিষয়ে কথা হয় বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল কাইয়ুম হুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, ওই স্থানে রাস্তা তৈরিসহ সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

সাদুল্লাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রেজাউল করিম জানান, পুরান লক্ষ্মীপুরের বকশীরদহ স্থানটি পরিদর্শন করা হবে। সেখানে সেতু-রাস্তা নির্মাণের উপযোগী হলে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close