ই-পেপার বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪
বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪

ইসলামি বিধানের চার মূলনীতি
প্রকাশ: শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:৩১ এএম  (ভিজিট : ২১৭)
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে ইসলামি শরিয়ত মেনে চললেই পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারে। এখানে কাটছাঁটের কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, এটা (কুরআন) মানুষের জন্য জ্ঞান, হেদায়েত (পথনির্দেশক) এবং রহমত (সুরা জাসিয়া : ২০)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যতদিন তা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটি হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের (সা.) সুন্নাহ (মিশকাত, ২২৪ পৃষ্ঠা)। আর কুরআন ও হাদিসে কোনো বিষয়ের স্পষ্ট সমাধান পাওয়া না গেলে করণীয় কী, সে নির্দেশনাও ইসলামে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি জানা না থাকে তবে অভিজ্ঞজনকে জিজ্ঞাসা করো (সুরা নাহল : ৪৩)। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর কালের আবর্তে মুজতাহিদ সাহাবি, তাবেয়ি, তাবে তাবেয়ি এবং অপরাপর ওলামায়ে কেরাম আল্লাহর ইলহাম অনুযায়ী কুরআন ও হাদিস থেকে গবেষণা করে ইজমা ও কিয়াস নামক শরিয়তের আরও দুটি মূল ভিত্তি উদ্ভাবন করেছেন এবং এ উসুলগুলোর আলোকে সমস্যার সমাধান করে দ্বীন পরিচালনা করে গেছেন। অতএব ইসলামি বিধানের মূলনীতি চারটি- ১. কুরআনুল কারিম, ২. সুন্নাহ বা হাদিস, ৩. ইজমা এবং ৪. কিয়াস ।

কুরআনুল কারিম : ইসলামি শরিয়তের প্রথম ও প্রধান মানদণ্ড এবং অকাট্য দলিল হচ্ছে কুরআনুল কারিম। পবিত্র কুরআন আল্লাহর বাণী। মানবজাতির হেদায়েতবর্তিকা। আসমানি কিতাবগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। এটি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর আরবি ভাষায় নাজিল হয়। কারণ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিজের ভাষা এবং তার কওমের ভাষা ছিল আরবি। লাওহে মাহফুজ থেকে কদর রাতে পৃথিবীর নিকটতম আসমান বায়তুল ইজ্জাহ নামক স্থানে সম্পূর্ণ কুরআন একসঙ্গে নাজিল হয়। এরপর সেখান থেকে রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মধ্যস্থতায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে সুরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। তখন তিনি হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন। এরপর বেশ কিছুদিন কুরআন নাজিল হওয়া বন্ধ থাকে। এরপর কুরআন খণ্ডাকারে নাজিল হতে থাকে। কখনো পাঁচ আয়াত, কখনো দশ আয়াত, কখনো একটি আয়াতের অংশবিশেষ এবং কখনো একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাজিল হয়। এভাবে অবস্থা, প্রয়োজন ও বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তেইশ বছর নবুওয়তি জীবনে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়। 

সুন্নাহ বা হাদিস : হাদিস অর্থ কথা বা বাণী। ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় মানদণ্ড সুন্নাহ বা হাদিস। কারণ কুরআন হলো মূল, আর সুন্নাহ বা হাদিস এর ব্যাখ্যা। পবিত্র কুরআনে সব বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে, আর সুন্নাহ বা হাদিসে রয়েছে ওই সব বিষয়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। শরিয়তের পরিভাষায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুখ-নিঃসৃত বাণী, রাসুল হিসেবে তার সম্পাদিত কাজ এবং সাহাবায়ে কেরামের শরিয়ত সম্পর্কিত এমন সব কথা ও কাজ- রাসুলুল্লাহ (সা.) যার প্রতিবাদ করেননি বা নীরব থেকে এর প্রতি মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন, তাই হাদিস। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা শরিয়তের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ, বিধিবিধান বর্ণনা করেছেন। এতে শরিয়তের আহকাম, মূলনীতি ও নির্দেশাবলি অতিসংক্ষেপে বিবৃত হয়েছে। আর এ সংক্ষিপ্ত নির্দেশগুলোকে কার্যকর করার জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিতেন। যেমন-পবিত্র কুরআনে সালাত কায়েম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কয় ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে, প্রতি ওয়াক্তে কত রাকাত পড়তে হবে এবং কীভাবে পড়তে হবে এর বিস্তারিত বর্ণনা কুরআনে নেই। তেমনিভাবে রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদির নিয়মকানুনের বিস্তারিত বর্ণনা কুরআনে নেই। আল্লাহর হুকুম অনুসারে রাসুলুল্লাহ (সা.) এগুলোর যেসব নিয়মকানুন বর্ণনা করেছেন তাই হাদিস হিসেবে গণ্য।

ইজমা : ইজমার আভিধানিক অর্থ ঐকমত্য। কুরআন এবং সুন্নাহর পরেই ইজমার স্থান। ইজমা শরিয়তের তৃতীয় মানদণ্ড। যা মাতলু ওহি (কুরআন) নয় ও গায়রে মাতলু ওহিও (হাদিস) নয়, অথচ তা সব মুজতাহিদের (গবেষক) মতে গ্রহণীয় সেটা ইজমা। সত্যযুগের মুসলিম উম্মাহর মুজতাহিদদের শরিয়তের কোনো বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করাকে ইজমা বলে। তা ছাড়া সত্যযুগের যেসব আলেমের একমত হওয়া গ্রহণযোগ্য সেসব আলেমের সর্বসম্মতিও ইজমা। সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম, মুজতাহিদে ইজাম এবং তায়ান্নালে নাস (সর্বসাধারণ মধ্যে ওই প্রচলিত আচরণ যা শরিয়তের আলেমগণ নিষেধ করেননি) ইজমার অন্তর্গত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর অনেক বিষয় সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্য বা ইজমা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। শরিয়তের যেসব সমস্যার সমাধান কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যেত না, প্রধান প্রধান সাহাবায়ে কেরাম অথবা সত্যযুগের মুজতাহিদরা সেসব বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে ইজমার মাধ্যমে সব বিষয়ের সমাধান করতেন।

কিয়াস : শরিয়তের দলিল হিসেবে ইজমার পর কিয়াসের স্থান। কিয়াস শরিয়তের চতুর্থ মানদণ্ড। কিয়াস শব্দের আভিধানিক অর্থ পরিমাণ, তুলনা ও অনুমান করা। শরিয়তের পরিভাষায় কুরআন হাদিসের পূর্বসিদ্ধান্তকে অনুসরণ করে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে আগের আইন প্রয়োগ করাকে কিয়াস বলে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের মধ্যে ওপরস্থ আদেশদাতাদেরও (মুজতাহিদ) আনুগত্য করো। অনন্তর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে দ্বিমত করো তবে তা (মীমাংসার জন্য) আল্লাহ ও রাসুলের দিকে অর্পণ করো (সুরা নিসা : ৫৯)। এখানে ‘আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ওপরস্থ আদেশদাতার আনুগত্য করা’ দ্বারা যথাক্রমে কুরআন, হাদিস, ইজমা অনুযায়ী চলা এবং ‘আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর দিকে অর্পণ করা’ দ্বারা কিয়াস অনুযায়ী চলাই উদ্দেশ্য (কাবিরি, খাজিন, বায়জাবি, রুহুল মায়ানি)।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে উদ্ভূত নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করতেন। এরপর চার মাজহাবের ইমামগণ কিয়াস প্রয়োগ করে অগণিত সমস্যার সমাধান করেন। তবে সাহাবায়ে কেরাম ও ইমামগণ কিয়াস প্রয়োগ করার সময় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতেন, কিয়াস যেন কুরআন, হাদিস ও ইজমার পরিপন্থী না হয়। এ চারটিই ইসলামি শরিয়তের অকাট্য দলিল ও মানদণ্ড। এগুলোর কোনোটিরই বিরোধিতা কিংবা অস্বীকার করা যাবে না। এগুলোকে শরিয়তের অকাট্য প্রমাণ মানতে হবে।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close