ই-পেপার সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

হজের প্রাথমিক প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
প্রকাশ: শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১:১৯ এএম  (ভিজিট : ২৯০)
সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য জীবনে একবার হলেও হজ করা ফরজ। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের হজ আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর সৌদি সরকার কর্তৃক বাংলাদেশকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে (হজ গাইডসহ) ১০ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে (হজ গাইডসহ) ১ লাখ ১৭ হাজার লোক হজ করতে পারবেন। বুধবার (৬ নভেম্বর) ২০২৫ সালের হজযাত্রীর কোটা বিভাজন করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে হজ এজেন্সিগুলোর কাছে পাঠানো এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, হজ গাইডকে হজযাত্রীর মতো প্রাক-নিবন্ধনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে হবে। হজ গাইডের তালিকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। আগামী বছর হজে যেতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধন চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হজ পোর্টালের তথ্যানুযায়ী, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৯৪৫ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ৮৪২ জনসহ মোট ১০ হাজার ৭৮৭ জন নিবন্ধন করেছেন।

সরকারি প্রস্তুতি
হজের জন্য প্রথমে সরকারিভাবে নিবন্ধন করতে হবে। পাসপোর্ট-ভিসা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এখনই গুছিয়ে ফেলতে হবে। বাংলাদেশ থেকে সুষ্ঠুভাবে হজ ও ওমরাহ পালন নিশ্চিত করতে এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়াও হজযাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত থাকে এ সংস্থাগুলো। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়। আপনার কর্তব্য হবে, সঠিকভাবে লাইন্সেপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হওয়া। আর্থিক মুনাফার লোভে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ লোক অবৈধ উপায়ে হজ-ওমরাহ পালনকারীদের থেকে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। তাই প্রথম থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। মুনাফাখোরদের চকটদার কথায় গলে গেলে চলবে না। সৎ, অভিজ্ঞ, আলেম এবং ধার্মিক মুয়াল্লিম ও কর্তৃপক্ষের খোঁজ নিয়ে তাদের সঙ্গে হজ-ওমরাহ করতে হবে।     

মানসিক প্রস্তুতি 
ইসলামের বিধানাবলির মধ্যে কিছু বিধান শারীরিক, কিছু আর্থিক আর কিছু শারীরিক ও আর্থিক উভয়টির সমন্বয়ে। নামাজ ও রোজা শুধু শারীরিক ইবাদত, জাকাত আর্থিক ইবাদত আর হজ হলো শারীরিক ও আর্থিকের সমন্বিত ইবাদত। ইসলামের এ বিধান পালনের জন্য বান্দাকে যেমন অর্থ খরচ করতে হয়, তেমনি শারীরিক ও অনেক পরিশ্রমও করার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে হজের মূল দিনগুলোতে প্রচুর পরিমাণ হাঁটাচলা করা লাগতে পারে। তাওয়াফের সময় অধিক মানুষ হওয়ায় দীর্ঘ সময় নিয়ে তাওয়াফ শেষ করতে হয়। মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় অবস্থানের জন্যও লম্বা পথ হাঁটা লাগতে পারে। যদিও যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু অত্যধিক মানুষের ভিড়ে ওসব বাহনে চলার সুযোগ না-ও পেতে পারেন। ফলে অনেকটা পথ হাজিদের হেঁটে হেঁটেই পার হতে হয়। এ ছাড়া যাত্রাপথে নানা ধরনের বিড়ম্বনার সম্মুখীন হন হজযাত্রীরা। সৌদি আরবে থাকা ও খাওয়া নিয়েও কখনো কখনো ঝামেলা বাধতে পারে। তাই আপনি যদি আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন যে, হজের দীর্ঘ সফরে যাচ্ছি, সেখানে আমার একটু-আধটু কষ্ট হতেই পারে। আল্লাহর জন্য এতটুকু কষ্টে আমার কিছুই হবে না ইনশাআল্লাহ। মানসিকভাবে এমন প্রস্তুতি থাকলে, আপনার জন্য অনেকটাই সহজ মনে হবে হজের সফর। 

শারীরিক প্রস্তুতি
হজের ফ্লাইট শুরু হওয়ার আগে মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন করতে হয়। তাই শারীরিকভাবে যারা অসুস্থ বা সফর করার অযোগ্য রয়েছেন, অতিসত্বর চিকিৎসা গ্রহণ করে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলুন। তা ছাড়া প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা, করোনা, মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক টিকা এবং স্বাস্থ্যসনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। বিমানবন্দরে প্রত্যেক হজযাত্রীকে স্বাস্থ্যসনদ দেখাতে হবে। তাই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রাখুন। তা ছাড়া সারা বছরই যাদের ছোটখাটো রোগ-বালাইয়ের সমস্যা থাকে, তারা ডাক্তারের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নেওয়ার ব্যবস্থা করে রাখতে পারেন। 

পরিশুদ্ধ নিয়ত
আপনি যদি হজে যাওয়ার ইচ্ছে করে থাকেন, তা হলে প্রথমেই নিয়ত পরিশুদ্ধ করুন। কেননা নিয়তের ওপরই আমল নির্ভরশীল। হাদিসে এসেছে-‘নিশ্চয়ই নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল’ (বুখারি : হাদিস ১)। তাই হজ করলে সমাজে মান-মর্যাদা বাড়বে, নামের সঙ্গে ‘হাজি’ বা ‘আলহাজ’ লেখা যাবে, নির্বাচনি লড়াইয়ে জনতাকে অধিক পরিমাণে প্রভাবিত করা যাবে ইত্যাদি ভাবনা থেকে নিজেকে পবিত্র করুন। এসব মনোবৃত্তিকে ‘রিয়া’ বলা হয়। রিয়া মারাত্মক অন্যায়, যাকে হাদিসে ছোট শিরক বলা হয়েছে। ছোট শিরক বুকে ধারণ করে হজ করলে হজ কবুল না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই রিয়া থেকে মুক্ত থাকুন ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন তিনি যেন রিয়ামুক্ত হজ পালনের তওফিক দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও এরূপ প্রার্থনা করতেন। এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! এমন হজের তওফিক দাও, যা হবে রিয়া ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতা হতে মুক্ত।’ (ইবনে মাজা : হাদিস ৮৯০)

ভালো সঙ্গী নির্বাচন
কথায় আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। এটা শুধু ছোটদের জন্য নয়, বড়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এবং হজের মতো আমলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। হজে যেমন অতি সহজে আল্লাহর সান্নিধ্য প্রাপ্তি ও পুরস্কার লাভ করা যায়, তেমনি অসৎ সঙ্গী-সাথিদের পাল্লায় পড়ার কারণে ক্ষতিরও কারণ হয়। অনেককে দেখা যায়, হজ করে এসে আগের চেয়ে খারাপ জীবনযাপন করে, মন্দ ও অসৎ পথে চলে, ধোঁকা ও প্রতারণার বাজার সরগরম রাখে। যেন হজের মাধ্যমে এসবেরই লাইসেন্স নিয়ে এসেছে সে। এটা তার হজ কবুল না হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই হজে বের হওয়ার আগে মুত্তাকি, পরহেজগার ও ভালো মানুষ নির্বাচন করতে হবে এবং তাদের পুণ্যসান্নিধ্যে হজপালনের চেষ্টা করতে হবে। একজন মুত্তাকির সাথি খুঁজে পাওয়া তেমন কোনো কষ্টসাধ্য বিষয় নয়। সদিচ্ছা থাকলে খুব সহজেই ভালো সাথি মিলে যেতে পারে। আর পাঁচ-সাতজন ভালো মানুষের সঙ্গে হজ করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা। রাসুলুল্লাহ (সা.) ভালো-মন্দ সঙ্গীর উপকার ও অপকার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো, আতর বিক্রেতা ও কামারের হাপরের মতো। আতর বিক্রেতা হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু কিনবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি সুবাস পাবে। আর কামারের হাপর হয়তো তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি : ৫৫৩৪) 

হজের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় দোয়া
আপনি যদি প্রথমবার হজে যান, তাহলে অবশ্যই হজের নিয়মকানুন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে রাখুন। হজ-সফরে কোথায়, কখন কী আমল করতে হবে, কোন আমল করা ফরজ, কোন আমল ওয়াজিব, কোন আমল সুন্নত ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। একই সঙ্গে হজের তালিবায়াসহ গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো মুখস্থ করে নিন। যদিও হজ সফরে এজেন্সির পক্ষ থেকে মুয়াল্লিম বা হজ গাইড থাকার কথা। কিন্তু আপনি যদি নিজেরটা নিজেই করতে পারেন, তা হলে আরেকজনের অপেক্ষায় বসে থাকবেন কেন! তা ছাড়া এমনও হতে পারে উপস্থিত সময় আপনি মুয়াল্লিমকে খুঁজে পাচ্ছেন না, তখন যেন ঝামেলায় না পড়তে হয় কিংবা আপনার হজের কাজ অসম্পূর্ণ না থাকে-তাই আপনার আশপাশে কোথায় হজ প্রশিক্ষণ চলছে সেখানে যোগাযোগ করে আজই হজের মাসআলাগুলো ভালোভাবে জেনে নিন। আপনার পরিচিত আলেম কিংবা ইতিপূর্বে হজ করেছেন এমন কারও থেকেও এসব জানতে পারেন। সম্ভব হলে হজ-সংক্রান্ত বই পড়েও জানতে পারেন।




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close